সীমান্ত সম্ভারে চুরি: ৫০ ভরি স্বর্ণসহ গ্রেফতার ৩
জানুয়ারি ১২, ২০২৫
খুলনাকে হারিয়ে দ্বিতীয় জয় সিলেটের
জানুয়ারি ১২, ২০২৫

নৈতিক মূল্যবোধ, প্রেক্ষিত বর্তমান সমাজ

খন্দকার মোকাররম হোসেন:
প্রারম্ভিক কথা : জীবনের পাঠশালা থেকে বুজতে পেরেছি যে, আর্দশিক দৃষ্টিভঙ্গি সম্পন্ন উন্নত মন- মানসিকতা এবং নৈতিক মূল্যবোধ সমৃদ্ধ আলোকিত জীবনই হচ্ছে সফল জীবন। আশির দশক থেকে মূল্যবোধের অবক্ষয় দারুনভাবে অনুভূত হয়েছে। সম-সাময়িক সময়ে এটি প্রকট আকার ধারন করেছে। আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যয়ন করেছি। ১৯৮৭ খ্রি: আমাদের সমাপনি উৎসবের শ্লোগান তথা প্রতিপাদ্য বিষয় ছিল- “কর্ম জীবনের দূর্নীতি রুখবো”। অথচ দূর্নীতি না করাটা স্বাভাবিক গুনাবলির মধ্যে পড়ে। এখন মনে হয় জীবনের ৬০ বছর পার করেও নৈতিক মূল্যবোধটাকে যেন আরো বেশী করে খুঁজছি।

বর্তমানে আমরা যেন এক অদ্ভুত সময়ে বাস করছি। আমাদের পরিবেশ খুব দ্রুত বদলে যাচ্ছে। ফেলে আসা অনেক কিছু কিংবা চেনা মানুষগুলো মূহুর্তেই হয়ে উঠছে অজানা। ব্যাক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সংস্কৃতিক , মূল্যবোধ সবই কেমন যেন অবক্ষয়ের চোরাবালিতে হারিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষাঙ্গন সমূহ যা কিনা হওয়ার কথা ছিল নীতি নৈতিকতা তৈরীর কারখানা তা নিজেই এখন প্রশ্নবিদ্ধ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদায়নে কখনো কখনো মেধার চেয়ে তদবির ও তেলবাজী বেশী শক্তিশালী হয়। বিশ^বিদ্যালয় সমূহে শিক্ষা- গবেষনা চর্চার চেয়ে রাজনৈতিক চর্চাই বেশি হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রেই স্কুল-কলেজের শিক্ষক নিয়োগ অর্থ কিংবা তদবির ঠিক করে দিচ্ছে কারা আমাদের শিশুদের অর্থাৎ ভবিষ্যত নাগরিকদের ন্যায়-নীতির পাঠ শেখাবেন। বর্তমান সমাজের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, যাদের হওয়ার কথা ছিল সততার ধ্রুবতারা, যারা কিনা সবাইকে পথ নির্দেশনা দেবেন তারাই আজ পথভ্রষ্ট।

৫২-র ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ৭১ এর মহান স্বাধীনতা সংগ্রামে রাজনীতির গৌরব উজ্জল ভূমিকা সমগ্র জাতি তথা সমগ্র বিশ্ব প্রত্যক্ষ করেছে। আর বর্তমান রাজনীতি? রাজনীতির নামে চলছে অর্থ সংগ্রহ/ আত্মসাতের মহা উৎসব। নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত রাজনীতি সমাজকে ঠেলে দিয়েছে এক অসহনীয় অবস্থায় মধ্যে। আগে মেধাবীরা রাজনীতিতে আসত। এখন ভালো ছাত্ররা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হয়; বি সি এস দিয়ে ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দেয়। বাকীরা করে রাজনীতি। কারন এখন রাজনীতি করে অঢেল অর্থ উপার্জন করা যায়। ক্ষমতালিপ্সু এক ধরনের মানুষ কায়েমী স্বার্থ হাসিলের জন্যই রাজনীতি করে। সম-সাময়িক সময়ে রাজনীতির মধ্যেকার নীতি শব্দটি বড়ই উপেক্ষিত, বড়ই অবহেলিত। তবে ৫ আগস্ট /২০২৪ অবশ্যই আশা জাগানিয়া।

নীতি নৈতিকতা বিবর্জিত সমাজে দূর্নীতি মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মত একটি জগদ্দল পাথর। ন্যায্য অধিকারের বঞ্চনা দূর্নীতিগ্রস্থ সমাজের একটি বিভৎস চিত্র। সেই সমাজে যোগ্যদের যেন ঠাই নেই।

কারন স্বজনপ্রীতি ও অনৈতিক আর্থিক বিনিময় অর্থাৎ ঘুষের বিনিময়ে সরকারি, বেসরকারি স্বায়িত্বশাসিত যে কোন সংস্থায় চাকরীতে যদি কখনও অযোগ্যরা নিয়োগ পায় এবং পদোন্নতি পায় কিংবা ভাল (?) পোস্টিং পায় তাহলে সমাজের যোগ্যরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। দূর্নীতি মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি করে, ফলে যোগ্যদের প্রতিভা বিকাশ বাধাগ্রস্থ হয়। দূর্নীতিতে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান খুব একটা সম্মানজনক নয়, কথাটি সবারই জানা। বর্তমানে দেশের জনগন তাকিয়ে আছে একটি শোষণমুক্ত, দূর্নীতিমুক্ত, সুষ্ঠু ন্যায়বিচারসমৃদ্ধ একটি মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন রাষ্ট্র ব্যবস্থার দিকে ।

বর্তমান সমাজ চিত্র : মূল্যবোধ ঘাটতি সম্বলিত বর্তমান সমাজ এক দূর্বসহ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করছে। হিংসা বিদ্বেষ, অপ-সংস্কৃতি চর্চা, মাদক প্রবণতা, মাস্তানি, ছিনতাই, হত্যা, ধর্ষন, সন্ত্রাস, জংগীবাদ, পরকীয়া, আত্মহত্যা, নারী নির্যাতন, ঘুষ-দূর্নীতি, দূর্বিত্তায়িত রাজনীতি, ভোগবাদী জীবন প্রভৃতি অনৈতিক/অন্যায় কার্যক্রম তথা সামাজিক অপরাধ বেড়েই চলেছে। সমাজে বেড়েছে সাইবার ক্রাইম, মোবাইল অশ্লীলতা, ইন্টারনেটের অপব্যবহার। এক সমীক্ষায় দেখা যে, প্রতি ১২ সেকেন্ড অন্তর একটি করে ফেসবুক একাউন্ট খোলা হচ্ছে যা বাংলাদেশের মত জনবহুল দেশের জন্মহারের চেয়েও বেশী। ফলে পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, পরমত সহিঞ্চুতা হ্রাস পাচ্ছে। মানুষ হয়ে যাচ্ছে যান্ত্রিক।

এক শ্রেনীর কিশোর/ যুবক তাদের হাতে থাকা মোবাইলে বুঁদ হয়ে আছে। এখন চলছে টিকটক জমানা। টিকটক সেলিব্রেটি হবার লোভে অনেক কিশোরী/তরুনী ধর্ষিত হচ্ছে, বিদেশে পাচার হচ্ছে। এক শ্রেনীর দুবৃত্ত এসব কিশোরী/তরুনীদের আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারন করে ব্যাক মেইল করছে। হত্যা, ধর্ষন, মারামারি, খুনোখুনি, ছিনতাই, রাহাজানি প্রভৃতি অপরাধ সংক্রান্ত সংবাদ প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন পত্রিকায় ছাপা হচ্ছে। অবস্থাদৃষ্ঠে প্রতিয়মান হয় যে, পত্রিকায় মূল্যবোধের অবক্ষয়ের খবরের ছড়াছড়ি। নারীর ক্ষমতায়ন, নারী স্বাধীনতা কিংবা লিঙ্গ বৈষম্য নিয়ে বিস্তর আলোচনা এবং কার্যক্রম চলছে; কিন্তু‘ মূল্যবোধর অবক্ষয়ের কারণে নারী নির্যাতন কাক্ষিত মাত্রায় কমছে না।

প্রসংগত উল্লেখ্য যে, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে দূর্নীতির ক্রম বিকাশ ঘটছে যা সংশ্লিষ্ট সকলেরই জানা আছে। ভূমি-নদী-জলাশয়-বন দখল, সরকারি ক্রয় খাতে দূর্নীতির প্রসার সর্বজনবিদিত। শেয়ার কেলেঙ্কারী, হলমাকর্স কেলেঙ্কারী, বালিশ/পর্দা কাহিনী, ডা: সাবরিনা ও শাহেদের অনৈতিক কাজের কথা আজও মানুষ ভোলেনি। সম্প্রতি ৫ই আগস্টের আন্দোলনের পর লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার, ব্যাংক লূট ইত্যাদি কাহিনী জনসম্মুখে পরিস্কারভাবে ধরা পড়েছে।

মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণ : মূল্যবোধের অবক্ষয়ের জন্য কোন একটি নিদির্ষ্ট কারণ চিহ্নিত করা যায় না। তথ্যাবিজ্ঞমহলের মতে প্রতীয়মান হয় যে, ভোগবদী/বিলাসী জীবনের উগ্র বাসনা, মেকি আভিজাত্য, সামাজিক / পারিবারিক সমস্যা, বেকারত্ব, দারিদ্র, জনসংখ্যার আধিক্য, মাদকাসক্তি, ইন্টারনেটে আসক্তি, অসম বন্টন ব্যবস্থা, সুশাসনের ঘাটতি প্রভৃতি বিষয় সমূহ মূল্যবোধের অবক্ষয়ের উল্লেখ যোগ্য কারণ। মানুষের সীমাহীন লোভ-লালসা থেকে দূর্নীতির উৎপত্তি। জবাবদিহিতার ঘাটতি থাকায় দূর্নীতির বিস্তার লাগামহীন হয়ে পড়েছে। দূর্নীতিবাজদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পরোক্ষভাবে দূর্নীতিকে উৎসাহিত করে । অতিমাত্রায় ভোগবাদী প্রবণতাও দূর্নীতির অন্যতম একটি কারণ। প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে যারা ক্ষমতাবান তাদের প্রত্যক্ষ/পরোক্ষ ভূমিকায় দূর্নীতির বিস্তার লাভ করে। লাগামগীন এই দূর্নীতি মুল্যবোধের অবক্ষয়েরই ফসল ।

আমাদের দেশে সামাজিক অবক্ষয়ে বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ অনেকাংশেই দায়ী । বিনোদনের নামে কোন কোন স্যাটেলাইট চ্যানেল এমন সব কু-রুচিপূর্ণ এবং হিংস্বা বিদ্বেষে ভরপুর নাটক/সিনেমা দেখানো হয় যা যুবক শ্রেনীসহ সব বয়সের দর্শকদের উপর ব্যপক প্রভাব পড়ে। পাশ্চত্য সংস্কৃতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপব্যবহার এবং হতাশা বোধও মূল্যবোধকে ভেঙ্গে দিচ্ছে। ইন্টারনেটের অপব্যবহার এবং ইন্টানেটে আসক্তি মূল্যবোধের অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ। তথ্য প্রযুক্তির কল্যানে (?) অপ-সংস্কৃতি সহজলভ্য হয়ে হাতের মুঠোয় ধরা দিচ্ছে যা মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটাতে সহায়তা করছে।

সমাধান কোন পথে? : আমাদের সমাজে যতগুলো সমস্যা রয়েছে তার মধ্যে মূল্যবোধের অবক্ষয় অন্যতম। আমাদের জাতীয় জীবনে মূল্যবোধের অবক্ষয় ক্রমশ: প্রকট আকার ধারন করছে। এ অবক্ষয় রোধ করা এখন সময়ের দাবী।
সময় খুব দ্রুত পাল্টাচ্ছে। ইন্টারনেটের যুগে পাঠ্যাভ্যাস কমে যাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা এখন আর অনেকেই পড়ে না। নজরুলের বিদ্রোহী কবিতায় তরুন সমাজ আগের মত উচ্ছসিত হয় না। সমরেশের কাল বেলা, কালপুরুষ কিংবা উত্তরাধিকার নিয়ে কোন আড্ডা জমে না। মোশারফ হোসেনের বিষাদ সিন্ধু কিংবা শরৎ রচনাবলি পড়ে কেউ চোখের পানি ফেলে না। সুনীলের নীরার সন্ধানে কেউ বের হয় না এখন। সুতরাং পাঠ্যভ্যাস ফিরিয়ে আনতে হবে। আগের সেই গান, সেই সুর, সেই ছবি আর নেই, নজরুলের সাম্যের গান কেউ শোনে না। মান্নাদের কফি হাউজের সেই আড্ডা আজ আর নেই। সেই সোনালী দিনগুলি কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। তাই সুস্থ্য বিনোদনকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে এবং সমাজের স্বার্থেই তা করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন পাঠাগার।

আমরা জানি পাঠাগারের মূল উপাদান হচ্ছে বই। বই এমন একটি শব্দ যার ভিতরে লুকিয়ে আছে হাজারো জ্ঞানের ভান্ডার। হাজারো স্বপ্ন পূরনের কারিগর হচ্ছে এই বই। মানুষের মননশীল, চিন্তাশীল এবং সৃষ্টিশীল যাবতীয় সূচনার বিস্ফোরণ একমাত্র বইয়ের মাধ্যমেই হতে পারে । পাঠাগারের গুরুত্ব/প্রয়োজনীয়তা সর্বজনবিদিত । পরিপূর্ণ আলোকিত মানুষ হতে পাঠ্যাভ্যাস একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ।

পাঠ্যাভ্যাস মানুষকে পরিশিলিত করে, পরিমার্জিত করে, সত্য-সুন্দর ও কল্যানের পথে মানুষকে ধাবিত করে। সৎ চরিত্র, নীতি-নৈতিকায় আদর্শিক দৃষ্টি ভঙ্গি, মানবিক মূল্যবোধ ও ধর্মীয় চেতনায় উদ্বুদ্ধ একজন মানুষই প্রকৃত পক্ষে আলোকিত মানুষ। একজন আলোকিত মানুষই পারে সমাজ, রাষ্ট্র তথা দেশকে আলোকিত করতে।

একটি শিশু জন্মের পর প্রথমত : তার পরিবার থেকেই মূল্যবোধ অর্জন করতে থাকে। পরিবার যেহতেু ব্যক্তির সামাজিকীকরনের প্রথম প্রতিষ্ঠান তাই মূল্যবোধ গড়ে তুলতে পিতা-মাতার কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। সন্তানকে সু-শিক্ষায় শিক্ষিত করার প্রয়াস নিতে হবে। সামাজিক অস্থিরতা ও অবক্ষয় থেকে মুক্তি পেতে পারিবারিক বন্ধন জোরদারের কোন বিকল্প নেই। প্রতিটি পরিবার যদি নৈতিকতা বিকাশে সোচ্চার হয়, তাহলে নির্দিধায় আমরা পাব একটি আদর্শ সমাজ। পরিবারের পর যেটি বেশী গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাথমিক স্তর থেকেই যেন নৈতিকতা ও সামাজিক অনুশাসন মেনে চলার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়, সংশ্লিষ্ট সকলকে সে দিকে কার্যকর দৃষ্টি প্রদান করতে হবে।

অসম প্রতিযোগিতা নিয়ন্ত্রণ, লোভ-লালসা পরিহার, বেকারত্ব হ্রাস, দেশ প্রেম জাগ্রত করা, দূবৃত্তায়িত রাজনীতির অবসান ঘটানো, চাওয়া- পাওয়ার ব্যবধান কমানো, ধর্মীয় চেতনার ও মানবিক মূল্যবোধ গড়ে তোলা, দূর্নীতি ও অপ-সংস্কৃতি প্রতিহত করার মাধ্যমে নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব। আর এর মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের আত্মত্যাগ ও অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশকে একটি নৈতিক মূল্যবোধ সম্বলিত সুখী-সমৃদ্ধ উন্নত দেশ হিসেবে বিশে^র দাঁড় করানো সম্ভব মর্মে তথ্যাভিঙ্গ মহল মনে করেন।

লেখক : খন্দকার মোকাররম হোসেন, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকতা

rr
rr

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *