নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুনতাসির আল জেমি জেল থেকে পালিয়েছে। ৫ আগস্টের পরে এ ঘটনা ঘটলেও ছয় মাস পর সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি জানানো হয়েছে। আবরার ফাহাদের ভাই আবরার ফাইয়াজের ফেসবুক পোস্ট থেকে জেমি পালানোর বিষয়টি সামনে আসে। এরপর রাতেই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেন বুয়েটের শিক্ষার্থীরা।
বিষয়টি সামনে আসার পর এ নিয়ে মুখ খুলেছে কারা কর্তৃপক্ষ। সোমবার রাতে কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. জান্নাত-উল ফরহাদ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মুনতাসির আল জেমির বন্দি নম্বর ৫১৭৭। তার বাড়ি নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দি কারাগার থেকে পলায়ন-সংক্রান্ত সংবাদ কারা কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। জনমনে বিভ্রান্তি নিরসনের লক্ষ্যে কারা কর্তৃপক্ষ এই মর্মে সবার অবগতির জন্য জানাচ্ছে যে, সংশ্লিষ্ট মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত কয়েদি মুনতাসির আল জেমি গত ৬ আগস্ট গাজীপুরের হাই সিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ২০২ জন বন্দির সঙ্গে একত্রে (৮৭ জন মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দিসহ) কারাগারের দেয়াল ভেঙে পলায়ন করে।
এ বিষয়ে ১৫ আগস্ট কোনাবাড়ী থানায় একটি মামলা করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। একই সঙ্গে সব কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়।
কারা কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, সব কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এরই মধ্যে ৩৫ জন মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত বন্দিসহ ৫১ জন বন্দিকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক সংশ্লিষ্ট বন্দিকে (জেমি) গ্রেপ্তারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
আবরার ফাহাদের ছোট ভাই ও বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাইয়াজ গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় তার ফেসবুক পোস্টে মুনতাসির আল জেমির পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, আবরার ফাহাদ হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি জেমি জেলখানা থেকে পালিয়ে গেছে ৫ আগস্টের পর। অথচ আমাদের জানানো হচ্ছে আজকে, যখন ওর আইনজীবী কোনো যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করতে আসেনি, তখন। ফাঁসির আসামির তো কনডেমড সেলে থাকার কথা ছিল, সে পালায় কিভাবে! পালানোর পরও এ তথ্য বাইরে না আসা তো এটাই প্রমাণ করে যে তাকে ধরতেও কোনো চেষ্টা করা হয়নি। পূর্বে থেকেই আরও তিনজন পলাতক আছে।
২০১৯ সালের ৭ অক্টোবর বুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের একটি গ্রুপ। আবরার হত্যা মামলায় ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর ঢাকার একটি আদালত ২০ বুয়েট শিক্ষার্থীকে মৃত্যুদণ্ড ও পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন।
এই মামলায় বিভিন্ন দণ্ডে দণ্ডিত ২২ জন বন্দির মধ্যে ২১ জন বর্তমানে কারাগারে রয়েছে।