মোঃ জাকির হোসেন:
দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন রোধে সরকার ঘোষিত ১১ দফা বিধিনিষেধ বৃহস্পতিবার থেকে কার্যকর হয়েছে। সিদ্ধান্তটি সময়োপযোগী সন্দেহ নেই; তবে এর যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
কারণ ইতোমধ্যে করোনার দুটি ঢেউয়ে দেশে দুই দফা টানা ‘লকডাউন’ বা বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছিল। এর ফলে অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিক্ষা কার্যক্রম হয়ে পড়েছিল স্থবির। এতে মানুষের জীবন ও জীবিকার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।
অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। এ অভিজ্ঞতার কারণে মানুষ পরবর্তী সময়ে বিধিনিষেধের প্রতি উদাসীন মনোভাব দেখিয়েছে।
তাছাড়া করোনা মহামারির শুরুতে মানুষের মধ্যে এ রোগের প্রতি যে ভীতি কাজ করেছে, তা এখন বহুলাংশে কমে গেছে। বস্তুত জীবিকার বিষয় যেখানে জড়িত, সেখানে মানুষকে বিধিনিষেধ দিয়ে আটকে রাখা কঠিন।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার ওমিক্রন রোধে যে ১১ দফা বিধিনিষেধ ঘোষণা করেছে, তার সবই পরিবেশ ও জীবন-জীবিকার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে যাচ্ছে। যেমন বিধিনিষেধে বলা হয়েছে-উন্মুক্ত স্থানে সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ও জনসমাগম বন্ধ থাকবে। অথচ বর্তমানে রাজধানীতে চলছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা। সেখানে ব্যাপক জনসমাগম হচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন স্থানে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ও সিটি করপোরেশন নির্বাচন উপলক্ষ্যে চলছে গণসংযোগ। স্বভাবতই এসব ক্ষেত্রে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। রেস্তোরাঁয় খাবার গ্রহণ এবং আবাসিক হোটেলে থাকার জন্য টিকার সনদ দেখাতে বলা হয়েছে। অথচ দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ এখনো টিকার আওতার বাইরে রয়েছেন। এসব মানুষকে বাদ দিয়ে হোটেল-রেস্তোরাঁ কতটা লাভজনকভাবে চালু রাখা সম্ভব, এ প্রশ্ন রয়েছে।
সড়ক পরিবহণ খাতে প্রায় ৭০ লাখ শ্রমিক রয়েছেন, যাদের সিংহভাগই দুই ডোজ টিকার আওতায় আসেননি। এদিকে গণপরিবহণে মোট আসনের বিপরীতে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলার কথা বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে এক দফা পরিবহণ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে।
অর্ধেক যাত্রী নিয়ে গণপরিবহণ চালানোর ক্ষেত্রে পরিবহণ মালিকরা হয়তো আরেক দফা ভাড়া বাড়ানোর জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন। সেক্ষেত্রে চাপ পড়বে মূলত যাত্রীদের ওপর। এ সবকিছু মিলে বিধিনিষেধ বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বাস্তবতায় যা প্রয়োজন তা হলো ১১ দফা বিধিনিষেধ বাস্তবায়নের সঙ্গে যেসব মন্ত্রণালয় বা কর্তৃপক্ষ সংশ্লিষ্ট রয়েছে, তাদের সমন্বিত কার্যক্রম। আর এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করতে হবে জনগণকে। এ ক্ষেত্রে যত বেশি সম্ভব মানুষকে টিকার আওতায় আনতে হবে। আশার কথা, দেশে এখন পর্যাপ্ত টিকা রয়েছে। সরকারের টিকা কার্যক্রমও অব্যাহত আছে। শুরু হয়েছে টিকার বুস্টার ডোজ দেওয়াও।
সরকারের টিকা ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হলে এবং টিকা কার্যক্রমে সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করলে করোনা মোকাবিলা করা অনেকটাই সহজ হবে। দেশে আবারও ‘লকডাউন’ বা সবকিছু বন্ধ করার ঘোষণা কারও কাম্য নয়।
কারণ এতে শিক্ষা, কর্ম, আয়-রোজগারে যে স্থবিরতা নেমে আসে, তা সবার জন্যই ক্ষতিকর। তাই করোনা পরিস্থিতি যাতে ভয়াবহ রূপ না নেয়, সেজন্য সবাইকে স্বাস্থবিধি মেনে সতর্ক হয়ে চলতে হবে।
মোঃ জাকির হোসেন, সম্পাদক, সিটিনিউজ সেভেন ডটকম