২২ হাজার টাকা স্কেলে লোক নিচ্ছে তাঁত বোর্ড
জুন ৬, ২০২২
ছুরিকাঘাতে বন্ধুর হাতে বন্ধু খুন, আটক ২
জুন ৬, ২০২২

ডিপোতে বিস্ফোরণ: অগ্নিকাণ্ড রোধে কার্যকর প্রস্তুতি থাকা দরকার

মোঃ জাকির হোসেন:

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নে বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এ সম্পাদকীয় লেখা পর্যন্ত ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৯ জন ফায়ার সার্ভিস কর্মী। এছাড়া পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ দগ্ধ ও আহত হয়েছেন ৩শরও বেশি মানুষ। ডিপোতে ৫০ হাজারের বেশি কনটেইনার রয়েছে। এর মধ্যে কেমিক্যাল কনটেইনার থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি নিহত ও আহত প্রত্যেকের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। ভয়াবহ বিস্ফোরণের এ ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া কেমিক্যাল সমুদ্রে ছড়িয়ে পড়ে যাতে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটাতে না পারে, সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ ইঞ্জিনিয়ারিং টিম। পাশাপাশি সীতাকুণ্ডের অগ্নিকাণ্ডে কাজ করতে ঢাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের ১৪ জনের বিশেষ ‘হ্যাজম্যাট (হ্যাজারডাস মেটারিয়াল) টিম’ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। উল্লেখ্য, এ টিমের সদস্যরা দেশে-বিদেশে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত। শনিবার রাতের বিস্ফোরণের ঘটনায় আহতদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও সিএমএইসহ ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে চট্টগ্রামের সর্বস্তরের চিকিৎসক ও নার্সদের ছুটি বাতিল করে কর্মস্থলে যোগ দিতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন রোগী ঢাকায় চলে এসেছেন। আহতদের চিকিৎসায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট প্রস্তুত রাখার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বন্দর শহর চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুণ্ডের দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে ক্ষতিগ্রস্তদের সর্বাত্মক সহযোগিতায় দলীয় নেতাকর্মীদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে বিএনপিও তাদের নেতাকর্মীকে আহতদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে। অতীতেও দেখা গেছে, যে কোনো বিপদ বা দুর্বিপাকে জাতিধর্মনির্বিশেষে বাঙালি মানবিকতার মশাল জ্বেলে আর্ত-অসহায়জনের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাঙালির এ গুণাবলি নিঃসন্দেহে মানবিকতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, বিএম কনটেইনার ডিপোর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটবে না বলে আমাদের বিশ্বাস। বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যারা বেঁচে গেছেন, তারা মৃত্যুকে খুব কাছ থেকে অবলোকন করেছেন-এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ যন্ত্রণা তারা সহজে ভুলতে পারবেন বলে মনে হয় না। নিশ্চয়ই দীর্ঘদিন তাদের তাড়িয়ে বেড়াবে দুঃসহ এ স্মৃতি। আর যারা নিহত হয়েছেন, তাদের সঙ্গে অনেক স্বপ্নেরও মৃত্যু ঘটেছে। আমরা মনে করি, বিএম কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের সঠিক কারণ উদ্ঘাটন এবং এক্ষেত্রে কর্তব্য পালনে কারও অবহেলা বা গাফিলতি পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উদ্বেগজনক হলো, দেশে অগ্নিকাণ্ডজনিত দুর্ঘটনা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এতে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রচুর প্রাণহানিও ঘটছে। তারপরও এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি কেন হচ্ছে, তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের ভাবা উচিত। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, কোনো দুর্ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ সাধারণত দায়ী হোতাদের বিরুদ্ধে মামলা, তদন্ত কমিটি প্রভৃতির আয়োজন করে কিছুদিন বেশ সরব ভূমিকা পালন করে। পরে বিষয়টি বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যায়।

অগ্নিকাণ্ড একই সঙ্গে জীবন ও সম্পদ বিনাশী। এ অবস্থায় সোনাইছড়ির বিএম কনটেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন ও দায়ীদের শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধসহ অগ্নিকাণ্ডজনিত বিপদ ও ক্ষতি ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার লক্ষ্যে সরকার কার্যকর প্রস্তুতি নিয়ে অগ্রসর হবে-এটাই প্রত্যাশা।

মোঃ জাকির হোসেন, সম্পাদক, সিটিনিউজ সেভেন ডটকম

rr
rr

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *