নতুন রূপে ডেস্কটপ জিমেইল
আগস্ট ৩, ২০২২
সুস্থ থাকতে ডাবের পানি
আগস্ট ৩, ২০২২

দেশজুড়ে অরক্ষিত রেলক্রসিং

মোঃ জাকির হোসেন:

দেশে অবৈধ ও অরক্ষিত রেলক্রসিংগুলো মৃত্যুফাঁদে পরিণত হওয়ার বিষয়টি বহুল আলোচিত। এত আলোচনার পরও বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের যেন কোনো মাথাব্যথা নেই।

সবচেয়ে দুঃখজনক হলো, লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো সমন্বিত পদক্ষেপ নিচ্ছে না। সম্প্রতি চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে খৈয়াছড়া ঝরনা লেভেলক্রসিংয়ের ভয়াবহ ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই ১১ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পালনে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতার বিষয়টি আবারও স্পষ্ট হয়েছে।

সারা দেশে ২ হাজার ৮০০-রও বেশি রেলক্রসিংয়ের মধ্যে এক হাজারেরও বেশি অবৈধ; গেটম্যান নেই ২ হাজার ২৫৮টিতে; এছাড়া অনেক বৈধ গেটও অরক্ষিত। এসব তথ্য থেকেই বোঝা যায় দেশের রেলক্রসিংগুলো কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

লেভেলক্রসিং দুর্ঘটনায় জানমালের অপূরণীয় ক্ষতি হলেও অরক্ষিত ক্রসিংগুলো সুরক্ষিত করার পদক্ষেপ না নেওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক।

যেহেতু দেশে ট্রেন দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ অবৈধ ও অরক্ষিত রেলক্রসিং, সেহেতু এ নিয়ে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ সমস্যার সমাধানে তৎপর হবে, এটাই ছিল প্রত্যাশিত।

কিন্তু বাস্তবে এর বিপরীত ঘটনাও ঘটে। জানা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ও জনপ্রতিনিধিদের কেউ কেউ অবৈধ রেলক্রসিংগুলো সুরক্ষার পুরো দায় রেল কর্তৃপক্ষের ওপর চাপাতে চান।

তাদের ধারণা, রেল কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করলেই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের মনে রাখতে হবে, এ ধরনের কথা বলে এলাকাবাসীর মন জয় করার চেষ্টা করে মূলত তারা এলাকাবাসীর ক্ষতিই করছেন।

দেশে প্রায় প্রতিদিনই রেলপথের কোনো না কোনো জায়গা থেকে লাশ উদ্ধার হচ্ছে। কাজেই বিষয়টিকে হালকাভাবে নেওয়ার কোনোই সুযোগ নেই। এ বিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। রেলক্রসিংয়ে ভুল বার ফেলার কারণেও দুর্ঘটনার আশঙ্কা তৈরি হয়। রেলক্রসিংগুলো সুরক্ষিত করার বিষয়টি কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ কাজের তালিকায় রাখে না। সেখানে দায়িত্ব পালনকারীদের বেতন কাঠামোসহ সামগ্রিক চিত্রেই তা স্পষ্ট। ফলে কর্তব্যরত ব্যক্তিরা দায়সারা গোছের দায়িত্ব পালন করেই সন্তুষ্ট থাকেন।

রেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার একটি বড় কারণ জনসাধারণের উদাসীনতা। যেহেতু মানুষ সচেতন নয়, সেহেতু দু-একজন গেটম্যান দিয়ে রেলক্রসিং এলাকার শৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব নয়।

ট্রেন আসার আগমুহূর্তে রেলক্রসিংয়ে বার ফেলা হলেও সিগনাল অমান্য করে পথচারী, মোটরবাইক চালক, এমনকি হালকা যানবাহনও পারাপারের চেষ্টা করে। দেখা যায়, ট্রেন আসছে অথচ মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে বা গান শুনতে শুনতে রেললাইন অতিক্রম করছে পথচারী।

মানুষ যখন এতটাই অসচেতন, তখন রেল কর্তৃপক্ষের একটি পরামর্র্শ হতাশাজনক। ‘নিজ দায়িত্বে ও সাবধানে’ রেলক্রসিং পারাপার হওয়ার পরামর্শ দিয়ে এবং ‘দুঘটনা ঘটিলে কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়’-এমন সাইনবোর্ড টাঙিয়ে রেল কর্তৃপক্ষ দায়মুক্ত থাকতে চায়। বিভিন্ন স্থানে রেললাইনের দুপাশে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে; কোনো কোনো জায়গায় রেললাইনের গা ঘেঁষে রেলের জমিতে বসানো হয়েছে দোকানপাট।

এসব বিষয়ে কি রেল কর্তৃপক্ষের কোনো দায় নেই? বস্তুত এসব কারণেও লেভেলক্রসিংয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে। কর্তৃপক্ষের উচিত সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ রেললাইনের সঙ্গে সম্পর্কিত সবার সঙ্গে বসে সমন্বিতভাবে পদক্ষেপ নেওয়া। তাতে এ ধরনের দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হতে পারে।

 

মোঃ জাকির হোসেন, সম্পাদক, সিটিনিউজ সেভেন ডটকম

 

rr
rr

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *