স্টাফ রিপোর্টার:
কয়েকবছর আগে কুলি থাকলেও বর্তমানে বিপ্লব লস্কর কোটিপতি। রাজধানীতে তার রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট ও প্লট। এই বিপ্লব কাস্টমস কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে থাকেন বলে জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
ডিবি পুলিশের দাবি এসবই বিপ্লব করেছে প্রতারণার মাধ্যমে। আর পুলিশের চোখে ধূলা দেওয়ার জন্য গাড়িতে তিনি সব সময় নেটওয়ার্ক জ্যামার ব্যবহার করতেন। আর মানুষের ফেসবুক আইডি, হোয়াটসঅ্যাপ, ই-মেইল আইডি সংগ্রহ করে ইউএস আর্মি, ইউএস নেভিসহ বিভিন্ন পরিচয় ব্যবহার করে টার্গেট করা ব্যক্তিদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তুলতেন। এভাবেই টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কের এক পর্যায়ে দামি উপহার স্বর্ণ, মূল্যবান পাথর, হীরা, বিশাল অংকের বৈদেশিক মুদ্রা, ডলার/ইউরো ইত্যাদির ফাঁদে ফেলেন। নাম-ঠিকানা পেতে শুরু করেন নানান মুখি ফন্দি।
সেই ব্যক্তিকে ভুয়া পার্সেলের ছবি পাঠান। আর প্রতারিত ব্যক্তিকে পার্সেল গ্রহণের অপেক্ষায় রাখেন। এবার গ্রহণ করেন নতুন পরিচয়। কলিং বিভাগে কর্মরত হিসেবে টেলিফোন করে নিজেকে কাস্টমস অফিসার পরিচয় দিয়ে জানান, কিং এক্সপ্রেস সার্ভিস থেকে একটি পার্সেল এসেছে। পার্সেলটি ছাড়াতে কাস্টমস হাউজ ফি বাবদ মোটা অংকের টাকা পরিশোধ করতে হবে।
পার্সেল পাওয়ার আশায় কাস্টমস কর্মকর্তার দাবি করা মোটা অঙ্কের টাকা সরল বিশ্বাসে পাঠিয়ে দেন প্রতারিতরা। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়দানকারী ব্যক্তি আবারও ফোন করে জানান, বিদেশি বন্ধুর পাঠানো পার্সেলে বিপুল পরিমাণ অবৈধ ডলার রয়েছে। যা ছাড়াতে আরও বেশি টাকা লাগবে। টাকা না দিলে মানি লন্ডারিং আইনসহ অন্যান্য আইনে তাকে মামলায় জড়ানোর হুমকি দেন। দাবি করা টাকা তাদের সরবরাহকৃত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণার শিকার ওই ব্যক্তিকে সকল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্লক করে দিতেন। একই সঙ্গে যোগাযোগ করা সকল নম্বর বন্ধ করে দিতো তারা।
এভাবেই বিপ্লব কুলি থেকে কোটিপতি হয়ে ওঠেন রাতারাতি। এখানেই থেমে থাকেনি বিপ্লব। তিনি আবারও ফোন করে পুলিশ এবং সাংবাদিক জেনে যাওয়ায় তাদের ম্যানেজের কথা বলে তাদের থেকে আরও বড় অংকের টাকা দাবি করেন এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করতে থাকেন।
এই বিপ্লবকেসহ ১০ জনকে আটক করে পুলিশ। তাকে নিয়ে গতকাল সোমবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালায় ডিবি। এসময় তাদের থেকে নগদ ১১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ও ২৬৩টি সিমকার্ড, একটি বিদেশি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, ২৮টি মোবাইল, একটি কম্পিউটার, ৪৯১টি এটিএম কার্ড, ২৬টি চেক বই, তিনটি ওয়ারলেস পকেট রাউটার, একটি প্রাইভেটকার, সাড়ে ৩ লাখ জাল টাকা জব্দ করা হয়।
আটক হওয়া অন্যরা হলেন- মূলহোতা বিপ্লব লস্করের সহযোগী সুমন হোসেন ওরফে ইমরান (৩১), মোহসিন হোসেন ওরফে শাওন (৩০), ইমরান হাসান ওরফে ইকবাল (৩০), নাজমুল হক রনি (৩০), মোসা. নুসরাত জাহান (২৪)। এছাড়া ক্যামেরুনের নাগরিক গুলগ্নি পাপিনিক (৩২), নাইজেরিয়ান নাগরিক চিডি (৪০), ইমানুয়েল (২৬), জন (৩১), আঙ্গোলিনার নাগরিক উইলসন ডে কনসিকাউ (৩৫)।
গ্রেপ্তার বিপ্লবের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর, খিলক্ষেত ও কাফরুল থানায় মানি লন্ডারিংয়ের মামলা রয়েছে। এছাড়া তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাসহ দেশের বিভিন্ন থানায় শতাধিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে ডিবি জানায়।
মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এসব বিষয় বিস্তারিত খুলে বলেন ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
সিটিনিউজ সেভেন ডটকম//আর//