স্টাফ রিপোর্টার:
রাজধানীর খিলগাঁও ও সবুজবাগ থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে রিকশা চোরচক্রের মূলহোতা কামাল হোসেন কমলসহ চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
চোরচক্রের সদস্যরা হলেন, কামাল হোসেন কমল (৩৫), রাশেদ (২৮), আলম হাওলাদার (৩৬), কাজল (৩৬), ফজলু (৩০) ও সাজু (২৫)।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন র্যাব-৩ এর স্টাফ অফিসার (মিডিয়া) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার ফারজানা হক।
তিনি জানান, রাজধানীর খিলগাঁও ও সবুজবাগ থানা এলাকার বিভিন্ন গ্যারেজে অভিযান চালালো হয়। অভিযানে রিকশা-অটোরিকশা চোরচক্রের মূলহোতা কামাল হোসেন কমলসহ তার পাঁচ সহযোগীকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩ এর একটি দল। এ সময় তাদের কাছ থেকে ব্যাটারিচালিত ১৪ টি অটোরিকশা, অটোরিকশার ১৮ টি চার্জার ব্যাটারি, ৬টি মোবাইল ফোন, একটি চাবি ও নগদ ৩৭০ টাকা জব্দ করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ওই চক্রের মূলহোতা কমল। সে ১৫ বছর আগে কাজের সন্ধানে ঢাকায় এসে রিকশা চালানো শুরু করে। একদিন তার রিকশা চুরি হয়ে যাওয়ায় সেটি খুঁজতে গিয়ে অপরাধ জগতের সদস্যদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। এরপর সে নিজেই রিকশা চুরিকে পেশা হিসেবে বেছে নেয়। সে ১২ বছর ধরে রিকশা চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি করে আসছে। নতুন রিকশায় ওঠে চালককে বিষাক্ত কোমল পানীয় খেতে দিয়ে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। কোনো রিকশাচালক কোমল পানীয় খেতে রাজি না হলে তার নাকের কাছে চেতনানাশক ভিজানো রুমালের ঘ্রাণ দিয়ে অজ্ঞান করে রিকশা নিয়ে যায়। এরপর সে রিকশা চুরির জন্য একটি চক্র গড়ে তোলে।
তিনি জানান, তারা রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় রিকশা নিয়ে ঘুরে বেড়ান। নতুন রিকশার ওপর তারা নজরদারি করে। তারপর কমল রিকশার ড্রাইভারকে সামনের রাস্তায় একটি বাসা থেকে আমার কিছু মালামাল তুলতে হবে বলে নিয়ে যায়। ওই মালামাল কাছাকাছি আরেকটি বাসায় পৌঁছে দিলে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি দেওয়ার প্রস্তাব দেয় এবং রিকশাচালকের কাছ থেকে মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে। বেশি ভাড়া পাওয়ার লোভে অনেক রিকশাচালক তার কথায় রাজি হয়ে যায়। তারপর তার সুবিধামত একটি বাসার সামনে রিকশা থামিয়ে চালককে বাসার ভেতরে মালামাল রেখে আসতে বলে। এই ফাঁকে চোরচক্রের অপর সদস্যরা রিকশা পালিয়ে যায়। এরপর আগে নিয়ে রাখা মোবাইল নম্বরে কল দিয়ে রিকশা পাওয়া গেছে জানিয়ে টাকা দাবি করতো এবং বিকাশের মাধ্যমে আদায় করতো। টাকা পাওয়ার পর একটি অজ্ঞাতস্থানে রিকশা রেখে যেতো। কিন্তু ওই কৌশলে রিকশা চুরি করার পর সে সহযোগীসহ একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়। পরে চুরির কৌশল পরিবর্তন করে।
চক্রটি রিকশা চুরির উপযুক্ত স্থান হিসেবে বাসাবো বাসস্ট্যান্ড এলাকা, মান্ডা এলাকাকে বেছে নেয়। এভাবে চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিগত সাত বছর ধরে ৫০০ এর অধিক ব্যাটারিচালিত রিকশা চুরি করেছে। এসব রিকশা তারা ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকায় বিক্রয় করতো। কমলের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় আটটি চুরি মামলা এবং ফজলুর নামে একটি চুরি ও একটি মাদক মামলা রয়েছে। এছাড়া আসামি কামাল হোসেন কমল, ফজলু ও সাজুকে গত ১৭ আগস্ট র্যাব-৩ গ্রেফতার হয়েছিল এবং জামিনে বের হয়ে পুনরায় একই কাজে লিপ্ত হয়।
গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানায় র্যাবের এ কর্মকর্তা।
সিটিনিউজ সেভেন ডটকম//আর//