নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
ঢাকার কেরানীগঞ্জের কলাতিয়ায় রাতভর ফ্যাক্টরি লুটের ঘটনায় একজন নারীসহ সাত ডাকাতকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে লুট হওয়া মালামালসহ দুটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) দুপুরে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডাকাতির ঘটনা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত তুলে ধরেন পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান। এ সময় তিনি বলেন, গত ২ জুলাই কেরানীগঞ্জের কলাতিয়ায় ফ্যাক্টরি লুটের ঘটনা ঘটে। ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ডাকাতির রহস্য উদঘাটনসহ সাত ডাকাতকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, গত দুই জুলাই রাত্র পৌনে ১টার দিকে একদল সশস্ত্র ডাকাত কেরাণীগঞ্জ মডেল থানার কলাতিয়া নিশানবাড়ী এলাকায় অ্যাপিজ গ্লোবাল লিমিটেড নামের একটি কারখানায় হানা দেয়। এ সময় দায়িত্বরত সিকিউরিটি গার্ড কারখানার গেটে তালা লাগানোর সময় ৪/৫ জন সশস্ত্র ডাকাত সিকিউরিটি গার্ডদের জিম্মি করে এবং এক জন সিকিউরিটি গার্ডকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে তিনটি আঙুল কেটে ফেলে। ডাকাতদল নাইট গার্ডদের হাত-পা, চোখ-মুখ বেঁধে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়। ডাকাতরা কারখানার সিকিউরিটি ইনচার্জকে উলঙ্গ করে এলোপাথারী মারপিট করে এবং হাত-পা, চোখ-মুখ বেঁষে খাটের উপর কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখে।
এরপর ডাকাতদলের আরও ৮/১০ জন সদস্য দুটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ে কারখানার প্রবেশ করে। অকাতলে কয়েকঘন্টা ধরে ভারবানার ভিতরে থাকা মূল্যবান কম্বল, কোটিং ফেব্রিক্স, রেইনকোর্ট ফেব্রিক্স, মেস কাপড়, স্ট্যান্ড ফ্যান, সিলিং ফ্যান একটি কাভার্ড ভ্যানে উঠায়। তারপর সিকিউরিটি গার্ডদের মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে লুণ্ঠিত মালামাল কাভার্ড ভ্যানে ভর্তি করে পালিয়ে যায়। চাঞ্চল্যকর এই ডাকাতির ঘটনায় ফ্যাক্টরির মালিক অজ্ঞাতনামা ১৪/১৫ জন আসামির বিরুদ্ধে কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় একটি ডাকাতি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়ের পর পুলিশ অভিযানে নামে। এ সময় আটজনকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো ডাকাত সর্দার হামিদুল ইসলাম (৪০), আমিরুল ইসলাম ওরফে রাজু (৪৫), জাহিদ মিয়া (৪০), মনিরুল ইসলাম ওরফে রতন ড্রাইভার (৩২), আজিজুল হক ওরফে আজিজ ড্রাইভার (৪৮), ইস্রাফিল (৩০), সজল মিয়া (৩০) ও রাশিদা বেগম (৩৩)।
তিনি জানান, আসামিরা উল্লেখিত ডাকাতির ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। লুণ্ঠিত মালামাল বিক্রয়ের জন্য মোশাররফের নামের পলাতক আসামির গুদামে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে পুলিশ পলাতক আসামি মোশাররফের স্ত্রী রাশিদার স্বীকারোক্তি ও দেখানোমতে তাদের গুদাম হতে উল্লেখিত ডাকাতির ঘটনায় লুণ্ঠিত সকল মালামাল উদ্ধার করা হয়।
তিনি আরও বলেন,গ্রেফতারকৃত আসামিরা সকলে আন্তঃজেলা ফ্যাক্টরি ডাকাতচক্রের সক্রিয় সদস্য। তারা ছদ্মবেশে ঢাকার আশেপাশের দূরবর্তী ও নির্জন এলাকায় অবস্থিত বিভিন্ন ফ্যাক্টরির মালামাল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেকি করে। অতঃপর যেসব ফ্যাক্টরির অবস্থান নির্জন এলাকায় এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থায় দুর্বল সেটিকে টার্গেট করে ডাকাতি করে। এই ঘটনায় জড়িত পলাতক অন্যান্য ডাকাতদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান অব্যাহত আছে।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,এখনো মূল হোতাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তাকে গ্রেফতারের অভিযান অব্যাহত আছে।
গ্রেফতারকৃত নারী সম্পর্কে পুলিশের কর্মকর্তা বলেন, ওই নারীর বাসা থেকে লুষ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। তবে এই মালামাল গুলো কিভাবে কিনেছেন, কোন মানি রিসিট আছে কিনা, এসব বিষয় খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন,ওই ফ্যাক্টরির মালিক আবুল কালাম আজাদ পুলিশ ও বিজিবির কাছে পোশাক বিক্রি করতেন। তবে পুলিশ ও বিজিবির কোনো মালামাল ডাকাতরা নেইনি বলেও জানান তিনি।
এদিক,অ্যাপিজ গ্লোবাল লিমিটেড মালিক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, যেসব মালামাল লুণ্ঠিত হয়েছে সব মাল উদ্ধার করা হয়েছে। খুব দূত সময়ের মধ্যে পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করেছে।
ফ্যাক্টরিতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ফ্যাক্টরি বয়স দুই বছর। এখনো সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়নি। তবে ঈদের আগে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। কিন্তু সিসি ক্যামেরার স্থাপন করা হয়নি।
//এস//