নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
‘…ফাহিম তুমি যেখানেই থাকো ফিরে আসো। সরাসরি পরিবার কিংবা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে হোক তুমি ফিরে আসো। তোমাকে হারিয়ে আমার জীবন শেষ হয়ে গেছে। বাবা তুমি যা পারো তাই করে খেয়ো, আমরা আর পড়াশোনা নিয়ে চাপ দিবো না। কিন্তু তুমি যদি অসৎ ব্যক্তি বা সংগঠনের মাধ্যমে ভুল পথে যেয়ে থাকো তুমি ফিরে আসো। আজ ১৬ দিন তোমাকে না পেয়ে আমাদের পৃথিবী অচল। অনেক কষ্ট করে তোমাকে বড় করেছি।’
জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়া ছেলেকে ফিরে পেতে এমনই আকুতি আয়ুব খান বাবুল নামে এক বাবার। পেশায় আইনজীবী আয়ুবের কলেজপড়ুয়া ছেলে ফাহিম খান ২৮ জুলাই বাড়ি ছাড়েন। ফাহিমের বাড়ি যশোর শহরের কোতোয়ালী এলাকায়। স্কুলজীবন থেকে খুবই মেধাবী ফাহিম গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উচ্চমাধ্যমিক পড়ছিলেন রাজধানীর নটরডেম কলেজে।
২৮ জুলাই বাড়ি ছাড়ার পর এখন জানা যাচ্ছে, ফাহিম মৌলভীবাজার কুলাউড়ায় ‘অপারেশন হিলসাইড’ চালানো জঙ্গি আস্তানায় ছিলেন। তবে অভিযানের বিষয়ে আঁচ পেয়ে দুর্গম পাহাড়ি ক্যাম্পটি থেকে পালিয়ে যান। তার সঙ্গে ছিল ডাক্তার জামিল। তারা কথিত ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বলে জানাচ্ছে সিটিটিসি।
রবিবার রাজধানীর মিন্টোরোডে ফাহিমের বাবা আয়ুব খান বাবুল কথা বলছিলেন সাংবাদিকদের সঙ্গে। জানান, ফাহিম স্কুলে পড়ার সময় থেকেই বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে আসছে। ২৮ জুলাই কাউকে কিছু না বলে সে বাসা থেকে বেরিয়ে যায়।
ফাহিমের বাবা বলেন, ‘যশোর জেলা স্কুল থেকে পাসের পর ফাহিম হোস্টেলে থেকে নটরডেম কলেজে উচ্চমাধ্যমিক পড়ছিল। প্রথমবর্ষে ভালো ফলাফল করলেও পরবর্তীতে অসুস্থ থাকায় পড়াশোনায় একটা গ্যাপ পড়েছিল।’
‘এই কারণে এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় তার অংশ নেওয়ার সুযোগ না থাকায় সে একটু মানসিকভবে বিষন্ন ছিল। পাশাপাশি তার পিছিয়ে যাওয়ার কারণে পরিবার থেকেও একটু চাপ দেওয়ায় নিজেকে একটু আড়াল করে রাখত।’
পারিবারিক চাপ কিংবা মোবাইলফোন বা কোনো ব্যক্তি ও সংগঠনের মাধ্যমে ফাহিম এই সংগঠনে জড়িয়েছে মনে করছেন ফাহিমের বাবা। বলেন, ‘ছেলে নিখোঁজের পর ২৮ জুলাই যশোর কোতোয়ালী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করি। এরপর ছেলের সন্ধান পেতে গোয়েন্দা পুলিশ ও ঢাকার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমি ছেলেকে ফিরে আসার আহবান জানাচ্ছি।’
জানা গেছে, চার ভাই-বোনের মাঝে বড় ফাহিম গাইনোকমাসিয়া, একটি নাক বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিল।
ছেলের পরিবর্তন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোরবানি ঈদের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে আসার পরে দেখতে পাই তার মুখে দাঁড়ি। মাঝে মাঝে নামাজ পড়ত। অথচ রোজার সময় হাফ প্যান্ট পড়ত। তেমন ভাবে ধর্ম পালন করত না। বাড়ি ছাড়ার আগে বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু হঠাৎ করে পরিবর্তন আসে একাই চলে যায়। তবে যাওয়ার সময় কোনো টাকা পয়সা নিয়ে যায়নি।’
গত শুক্রবার মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের একটি দুর্গম এলাকায় জঙ্গি আস্তানা নানান গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন, সোয়াট ও পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্যরা ঘিরে রাখে। পরদিন শনিবার সিটিটিসি প্রধান আসাদুজ্জামানের নেতৃত্বে ‘অপারেশন হিল সাইড’ পরিচালনা করা হয়।
অভিযানে ওই আস্তানা থেকে চারজন পুরুষ ও ছয়জন নারীকে আটক করার পাশাপাশি তিন কেজি বিস্ফোরক, ৫০টি ডেটোনেটর, প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, কমান্ডো বুটসহ অন্যান্য প্রশিক্ষণ সরঞ্জামাদি, ছুরি-রামদাসহ অন্যান্য ধারালো অস্ত্র এবং নগদ তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা ও স্বর্ণালংকার উদ্ধার করা হয়। আটক হওয়া সবাই নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলার’ সদস্য বলে জানিয়েছে সিটিটিসি।
//এস//