নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ
আগস্ট ২৪, ২০২৩
শ্যামলীতে মলম-অজ্ঞান পার্টির ৫ সদস্য গ্রেফতার
আগস্ট ২৪, ২০২৩

রাতভর নির্যাতন: এনবিআর কর্মকর্তার গাড়িচালক মাসুদকে খুঁজছে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক নারী কর্মকর্তাকে তুলে নিয়ে গ্যারেজে আটকে নির্যাতন ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার সাবেক গাড়িচালক ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে।

তবে অপহরণের ১৮ ঘণ্টা পর পালিয়ে বাঁচেন এনবিআরের ওই নারী কর্মকর্তা।

ভুক্তভোগী হলেন এনবিআরের যুগ্মকমিশনার (ট্যাক্স) মাসুমা খাতুন। কর অঞ্চল-২-এ কর্মরত তিনি।

এ নারীর দেওয়া তথ্য মতে, অভিযুক্ত অপহরণকারী তথা তার সাবেক গাড়িচালকের নাম মো. মাসুদ। তিনি ভয়ঙ্কর এক অপহরণ চক্রের অন্যতম সদস্য।

মাসুদকে খোঁজা হচ্ছে জানিয়ে এ ঘটনায় করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রমনা মডেল থানার ওসি আবুল হাসান বলেন, ভিকটিমের দেওয়া তথ্য মতে তিন আসামি গ্রেফতারের পর তাদের বিরুদ্ধে ১৯ আগস্ট একটি মামলা হয়। তদন্তে নেমে ওই কর্মকর্তাকে অপহরণ ও নির্যাতনকারীদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা গেছে।

এই চক্রের অন্যতম সদস্য মাসুদকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। ভিকটিম এবং গ্রেফতার ব্যক্তিদের বর্ণনা অনুযায়ী মাসুদের চেহারার স্কেচ আঁকা হয়েছে। তার মুখে দাড়ি আছে। আমরা তার বাসা খুঁজে বের করেছি।

গ্রেফতারকৃতদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওসি আরও জানান, টাকার লোভেই এই অপহরণের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। প্রধান অভিযুক্ত মাসুদ তার সহযোগীদের জানিয়েছিলেন, ভুক্তভোগী ভুক্তভোগী অপহরণ করতে পারলেই মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করা যাবে। মাসুদই পরিকল্পনা করে তাদের বাহিনীর সদস্যদের তথ্য দেয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী সহযোগীদের নিয়ে মাসুদ এই ঘটনা ঘটায়। এই চক্রে একাধিক পেশাদার অপহরণকারী রয়েছে। তবে মামলার এজহারে ৬জনের নাম জানিয়েছেন ভু্ক্তভোগী। এই ঘটনায় ইতোমধ্যে শান্ত, পনু, শাহীনসহ আরও ৫-৬ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ।

তিনি আরও বলেন, ভিকটিম খুবই অসুস্থ। এ কারণে তার কাছ থেকে বিস্তারিত জানতে পারিনি। তিনি সুস্থ হলে মাসুদ সম্পর্কে আরও তথ্য জানা যাবে।

দ্রুতই মাসুদ ও তার বাকি সহযোগীদের গ্রেফতার করা হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।

যেভাবে অপহরণ করা হয় মাসুমাকে:

১৮ আগস্ট রাত ৮টার দিকে বড় মগবাজার থেকে নিজের গাড়িতে করে সিদ্ধেশ্বরীর বাসায় ফিরছিলেন মাসুমা খাতুন। সোয়া ৮টার দিকে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সামনের রাস্তায় গাড়িটি পৌঁছালে একটি মোটরসাইকেল ধাক্কা দেয়। চালক গাড়িটি থামালে অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা মাসুমার গাড়িচালক আনোয়ারের কাছ থেকে চাবি কেড়ে নেয়। এরপর তারা ভুক্তভোগী ও গাড়িচালককে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে আনোয়ারকে গাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ভুক্তভোগীকে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায় তারা। ওই রাতে সবুজবাগের একটি বাসার গ্যারেজে গাড়িটি ঢোকানো হয়। ওই গাড়িতেই আটকে রেখে তার ওপর রাতভর চলে নির্যাতন।

নির্যাতনের সময় ভুক্তভোগীর চিৎকার যাতে বাইরে না যায়, সেজন্য তার মুখ স্কচটেপ দিয়ে আটকে দেওয়া হয়। পরে পানি চাইলে স্কচটেপ খুলে দেওয়া হয়। এভাবে পরদিন দুপুর ২টা পর্যন্ত থেমে থেমে চলে তার ওপর শারীরিক নির্যাতন। এ সময় তার কাছে থাকা দেড় লাখ টাকা ও একটি দামি মোবাইল ফোন নিয়ে যায় তারা।

যেভাবে মুক্ত হন মাসুমা খাতুন:

এ বিষয়ে বর্ণনা দেন ভুক্তভোগীর স্বামী ইলিয়াস খান। তিনি বলেন, ১৯ আগস্ট বেলা ২টা পর্যন্ত স্ত্রীর কোনো খোঁজ পাচ্ছিলাম না। দুপুর ২টার পর দুর্বৃত্তরা চক্রের দুই-তিনজনকে গাড়ির পাহারায় রেখে অন্যরা দুপুরের খাবার কিনতে যায়। এই সুযোগে আমার স্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে বাঁচাও-বাঁচাও বলে চিৎকার শুরু করে। তার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে।

এদিকে মুক্তিপণের দাবিতে চলা অমানুষিক নির্যাতনে বাঁ পা ভেঙে গেছে মাসুমার। তার চোখও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া মাথা ফেটে যাওয়াসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্ত জমাট বেঁধেছে। গ্রিন রোডের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে তার।

মাসুমা জানান, দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায়ের পরও মন গলেনি অপহরণকারীদের। মুক্তিপণের পুরো টাকা আদায়ের জন্য রাতভর নির্যাতন করে তারা। দেওয়া হয় হত্যার হুমকিও। হত্যার পর লাশ বস্তাবন্দি করে বুড়িগঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও আঁটা হয়।

//এস//

rr
rr

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *