ঢাকায় মাদক বিক্রি ও সেবনের অভিযোগে গ্রেফতার ৩৯
সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩
গাজীপুরে তাকওয়া পরিবহনের বাস থেকে ফেলে নারীকে হত্যা
সেপ্টেম্বর ৯, ২০২৩

রাজধানীতে দৈনিক মজুরিভিত্তিক ছিনতাই চক্র, ব্যর্থ হলেও টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে থাকলেও চলাচল দলবদ্ধ হয়ে। চলার পথে নিরীহ লোকজনকে টার্গেট করে তাদের অপারেশনাল কার্যক্রম চালায়। জটলা তৈরি করে টার্গেট ব্যক্তির কাছ থেকে মোবাইল-মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয় কৌশলে। গ্রুপভিত্তিক ছিনতাইকারী চক্রের অভিনব এমন কৌশলটি বুঝতে পারেন না সাধারণ পথচারীরাও। দিনে কৌশলে ছিনতাই করলেও রাতে চক্রটি নামতো সরাসরি অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাইয়ে। আর এ কাজের জন্য দৈনিক বেতন বা মজুরিও পায় চক্রের সদস্যরা।

সম্প্রতি মৎস্য ভবন এলাকা থেকে অভিনব পদ্ধতিতে এমন ছিনতাই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গ্রেপ্তারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য জানতে পেরেছে।

পুলিশ জানায়, শাহবাগ থানা পুলিশের অভিযানে গ্রেপ্তার তিনজন হলেন- মো. জনি (২৭), মো. সুমন (১৯) ও মো. আরমান (২২)। তাদের কাছ থেকে ছয়টি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ও দুটি সুইচ গিয়ার উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।

গ্রেপ্তার ছিনতাই চক্রের অপরাধের কৌশল সম্পর্কে পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা ঢাকা শহরে বিভিন্ন পয়েন্টে বাসে ওঠা যাত্রীদের টার্গেট করে। এ সময় কৃত্রিম ভিড় সৃষ্টি করে তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন চুরি করে। গ্রেপ্তার জনি, সুমন ও আরমান তাজুল নামের আরেক জনের নেতৃত্বে মোবাইল ফোন চুরি করে। তাজুলকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।

গ্রেপ্তার সুমনের বিরুদ্ধে একটি ডাকাতির মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা দিনে গণপরিবহনে বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে ও রাতে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সংঘবদ্ধভাবে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাই করতো। এ চক্রের সদস্যরা বেতনভুক্ত কর্মচারীর মতো তাদের কার্যক্রম চালিয়ে থাকে। ছিনতাই কাজে একজন কামলা প্রতিদিন ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত পেয়ে থাকে।

গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শাহবাগ থানার ওসি নূর মোহাম্মদ জানান, এ চক্রের সদস্যরা দিনে বিভিন্ন রুটের গণপরিবহনে উঠে ছিনতাই করে। এক্ষেত্রে তারা পাঁচ শ্রেণিতে বিভক্ত হয়ে দায়িত্ব পালন ও বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি করে। শ্রেণিগুলো হচ্ছে মহাজন, ঠেকবাজ, মিস্ত্রি, জমাদার ও পাসম্যান। তারা একসঙ্গে বাসে ওঠে। ৩-৪ জন ঠেকবাজের দায়িত্ব পালন করে টার্গেট করা যাত্রীকে ঘিরে জটলা তৈরি করে।

একজন মিস্ত্রি জটলার মধ্যে দ্রুত মোবাইল-মানিব্যাগ হাতিয়ে নিয়ে মুহূর্তের মধ্যে পাসম্যানের কাছে দিয়ে দেয়। পাসম্যান সেটা জমাদারের কাছে দেয় ও জমাদার দ্রুত গাড়ি থেকে নেমে যায়। যাত্রী যদি বুঝতে পারেন যে তার মোবাইল-মানিব্যাগ নেই, তখন যদি তিনি চিৎকার করেন, তাকে ঘিরে যারা জটলা তৈরি করেছে, তারাও ওই যাত্রীর সঙ্গে যোগ দেয়। উদ্ধার করে দেয়ার কথা বলে তাকে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়। কাছাকাছি কোথাও নিয়ে তাকে মারধর শুরু করে। বাধ্য হয়ে ওই যাত্রী সেখান থেকে পালিয়ে যান। এটা গণপরিবহনে তাদের ছিনতাইয়ের কৌশল।

এছাড়া সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা সংঘবদ্ধভাবে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাফেরা করে। রিকশা-অটোরিকশার যাত্রী কিংবা পথচারীকে টার্গেট করে অস্ত্র ঠেকিয়ে ছিনতাই করতো।

ওসি আরও জানান, জমাদার ছিনতাই করা মোবাইল-টাকা মহাজনের কাছে হস্তান্তর করেন। মহাজন সেটা বিক্রি করে টাকা নগদ করে। প্রত্যেক সদস্য দিনে ৩ হাজার টাকা মহাজনের কাছ থেকে বেতন নেয়। ছিনতাই করতে পারলেও এ মজুরি তারা পায়, ছিনতাইয়ে ব্যর্থ হলেও পায়।

ছিনতাইকারী চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া শাহবাগ থানার এসআই সাইদুল ইসলাম বলেন, চক্রের দলনেতা হলেন তাজুল। প্রায় দেড়যুগ ধরে রাজধানীতে ছিনতাই করে আসছে। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ছিনতাইয়ের মামলা আছে কমপক্ষে ২০টি। বারবার গ্রেপ্তার হলেও জামিনে বেরিয়ে একই কাজ করে।

পুলিশ সূত্র জানায়, শাহবাগ রাজধানীর অন্যতম ছিনতাইপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত। গত পাঁচ বছরে শুধু শাহবাগ এলাকায় ৮৩টি ছিনতাইয়ের ঘটনায় মামলা হয়েছে। মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, শাহবাগ মোড়, মৎস্য ভবন মোড়, প্রেসক্লাবের সামনে, রেল ভবনের সামনে, হাইকোর্ট মাজার মোড়, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে, টিএসসি মোড় ও বাংলা একাডেমির সামনের সড়কে বেশি ছিনতাই হয়।

ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতের সাধারণ নিবন্ধন খাতার তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে গত পাঁচ বছরে ঢাকা মহানগর এলাকায় ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে ৮৪৬টি। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, শাহবাগ, রমনা, যাত্রাবাড়ীসহ মোট ১৫টি থানা এলাকায় ছিনতাই অপেক্ষাকৃত বেশি।

এ বিষয়ে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী খালেদ মোশাররফ বলেন, ছিনতাইয়ের যত ঘটনা ঘটছে, সেই হিসাব পুলিশের হিসাবে আসে না। ছিনতাইয়ের শিকার হয়েও অধিকাংশ লোক মামলা করেন না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগ) মো. ফারুক হোসেন বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় আগের থেকে মামলা নেয়ার সংখ্যা বেড়েছে। এছাড়া সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। পাশাপাশি গোয়েন্দারাও কাজ করছে।

//এস//

rr
rr

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *