এমপি আনারকে আগেও দুইবার খুনের পরিকল্পনা হয়: ডিবি
মে ২৫, ২০২৪
১৮ জেলায় আঘাত হানতে পারে রেমাল: দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী
মে ২৬, ২০২৪

রোববার আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি আজ রাতেই ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে রেমাল।

এটি আগামীকাল রোববারের (২৬ মে) কোনো এক সময় বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।

এটি আপাতত পশ্চিমবঙ্গের সাগর দ্বীপ ও বাংলাদেশের খেপুপাড়ার মধ্যে আছড়ে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে শেষ মুহূর্তে এর দিক পরিবর্তনও পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। রেমালের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩৫ কিলোমিটার বেগে ঝড়ো বাতাস বইতে পারে।

এদিকে, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় উপকূলীয় জেলাগুলোতে চলছে প্রস্তুতি। সভা করে দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন। ঝড় মোকাবিলায় কাজ করবে কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, রেডক্রিসেন্টসহ বিভিন্ন সেচ্ছাসেবী সংগঠন।
রোববার সন্ধ্যায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমাল খুলনা থেকে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ার মাঝামাঝি স্থানে আঘাত হানতে পারে। এরই প্রভাবে কিছুটা উত্তাল হয়ে উঠেছে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত। এছাড়া সাগর ও নদীতে জোয়ারে পানির উচ্চতা ২-৩ ফুট বেড়েছে। পানির স্রোতে মিঠাগঞ্জ, নীলগঞ্জ, ডালবুগঞ্জ, ধানখালী, চম্পাপুর ও লালুয়া ইউনিয়নের কয়েক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভাঙ্গতে শুরু করেছে। ঝড় এলে বড় ধরনের ক্ষতির আশংকা করছে এখানকার বাসিন্দারা।
শনিবার (২৫ মে) দুপুরে আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, শনিবার সন্ধ্যা থেকেই সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব সমুদ্র তীরবর্তী এবং আশপাশের অঞ্চলে পড়তে শুরু করবে। আর মধ্যরাত থেকেই পুরোপুরি প্রভাব শুরু হতে পারে। সেজন্য ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। নিম্নচাপটি এখন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে আরও ঘনীভূত হয়ে শক্তিশালী হচ্ছে।

এদিকে ঢাকার আবহাওয়া অধিদফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে আবহাওয়াবিদ আজিজুর রহমান বলেন, সাগরে অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি আরও অগ্রসর ও ঘনীভূত হচ্ছে। আজ রাত ৯টায় আরও শক্তি সঞ্চয় করে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। পরের দিন রোববার সকাল নাগাদ প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।

এই আবহাওয়াবিদ জানান, নিম্নচাপটি আজ দুপুরে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৫০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৪২৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।

গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ঘূর্ণিঝড় রেমাল বাংলাদেশে আঘাত হানবে এটা ধরেই এর সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।
প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে। এজন্য সরকার সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। সারাদেশে চার হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আজ রাতেই মহাবিপৎ সংকেত দেখানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রতিমন্ত্রী।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, এই ঘূর্ণিঝড় নিয়ে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত পূর্বাভাস ও ভূমি অতিক্রমের সম্ভাব্য এলাকার ভিত্তিতে দেশের ছয়টি উপকূলীয় জেলাকে বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলাগুলো হলো সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী ও ভোলা।

প্রতিমন্ত্রী মুহিববুর রহমান বলেন, আমরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোর জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে স্থানীয় প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছি। উপকূলবর্তী সব জেলাকে ঘূর্ণিঝড়ের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত পূর্বাভাস ও সম্ভাব্য ভূমি অতিক্রম এলাকার ভিত্তিতে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, খুলনা, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা জেলাসমূহকে অধিকতর প্রস্তুত থাকার জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এক সপ্তাহ ধরে এই ঝড়টির বিষয়ে আমরা খোঁজখবর রাখছি। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিয়মিতভাবে পূর্বাভাস দিচ্ছে এবং আগাম কার্যাবলি (অ্যান্টিসিপেটরি অ্যাকশন) ও সাড়া প্রদানে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতা করছে। আমরা ভারতে অবস্থিত আঞ্চলিক বিশেষায়িত আবহওয়া কেন্দ্রের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য আন্তর্জাতিক পূর্বাভাস মডেল নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সময়োপযোগী কার্যক্রম গ্রহণ করছি।

চার হাজার আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পর্যাপ্ত খাবার ও সরঞ্জাম রয়েছে। অতিরিক্ত প্রয়োজন হলে যেন ঢাকা থেকে সরবরাহ করা যায় সেই প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলায় সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী বলেন, একটি সাইক্লোন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে সাগরে এক নম্বর সংকেত রয়েছে। আগামী এক-দুই ঘণ্টার মধ্যে সংকেত বাড়বে এবং রাতেই মহাবিপৎ সংকেত দেওয়া হতে পারে।
মহিববুর রহমান বলেন, এই ঘূর্ণিঝড়ে সাতক্ষীরা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত পুরো এলাকা কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সাত থেকে ১০ ফুট পর্যন্ত জলোচ্ছ্বাস হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ঝড়ের সঙ্গে প্রচুর বৃষ্টিপাত হবে, ফলে পাহাড়ি অঞ্চলে প্রচুর ভূমিধস হতে পারে। সব কিছু মাথায় রেখে সার্বিক প্রস্তুতি আমরা নিয়েছি।
তিন দিকে নদী ও এক দিকে সাগরঘেরা উপজেলা রাঙ্গাবালী। জনপদের মানুষের কাছে দুর্যোগের খবর মানেই আতঙ্ক। এখানেও নদ-নদীতে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে এক থেকে দেড় ফুট বেড়েছে।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক বলেন, সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা পটুয়াখালী জেলায় ৭০৩টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যাদের ধারণ ক্ষমতা তিন লাখ ৫১ হাজার ৫০০ জন মানুষ এবং ৮৭ হাজার ৮৭৫টি গবাদি পশু রাখার সুযোগ রয়েছে।
সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় ১৬৯টি আশ্রয় কেন্দ্রসহ ৮৮৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছেন ছয় হাজার স্বেচ্ছাসেবক।

২০০৯ সালের ২৫ মে সুন্দরবনে আছড়ে পড়েছিল ভয়ংকর ঘূর্ণিঝড় আইলা। ভয়ংকর সেই দুঃস্বপ্ন ফের ফিরে আসতে পারে এই শঙ্কায় মোংলার মানুষ। তবে প্রশাসন বলছে তারা যে কোন ধরনের পস্থিতির জন্য প্রস্তুত রয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় বরগুনায় সচেতনতামূলক মাইকিং করেছে কোস্ট গার্ডের সদস্যরা।
মোংলাতেও কোস্টগার্ড মাইকিং করেছে। মোংলার কোস্টগার্ড কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট মোঃ মুনতাসীর ইবনে মহসীন বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণ, মৎস্যজীবী ও নৌযান সমূহকে ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ কোস্টগার্ড পশ্চিম জোন উপকূলীয় অঞ্চলে জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।

এছাড়া জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সুন্দরবন উপকূলের এই বিস্তীর্ণ এলাকায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের স্টেশন এবং আউটপোস্ট সমূহ মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করছে। ঘূর্ণিঝড়ের বিপদজনক পরিস্থিতিতে জীবন রক্ষার জন্য নিকটবর্তী সাইক্লোন সেল্টার স্টেশনে আশ্রয় গ্রহণের প্রস্তুতির জন্য সকলকে সচেতন করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
ঘূর্ণিঝড় রেমালকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে বরিশালে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে। জেলার ৫৪১টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

রেমালের গতিপ্রকৃতি ও ধরন পর্যবেক্ষণ করছে চট্টগ্রাম বন্দর কতৃপক্ষ। উপকূলীয় মানুষকে সচেতন করতে কাজ করছে কোস্টগার্ড।

rr
rr

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *