নিজস্ব প্রতিবেদক
নির্বাচনের জন্য দ্রুত সংলাপের আশা করছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। অনির্বাচিত একটি সরকারের কয়েকজন ব্যক্তি মিলে ‘রাষ্ট্র সংস্কার’ করে ফেলবেন, এমনটা তিনি বিশ্বাস করছেন না।
মির্জা ফখরুল অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নির্বাচন নিয়ে ‘অতি দ্রুত’ আলোচনা চেয়েছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস কী করতে চাচ্ছেন, সে বিষয়ে রোডম্যাপও চেয়েছেন।
সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সরকারের আমলের প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদের নবম মৃত্যুবার্ষিকীতে শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনায় তিনি এই দাবি জানান।
বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমি নির্বাচন কথাটার ওপর জোর দিতে চাই। এই যে সংস্কারের বিষয়টা এসেছে, সব সময় আসছে, সেই সংস্কারের জন্য নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেটা কীভাবে আসবে? সেটা আসবে একটা নির্বাচিত পার্লামেন্টের মধ্য দিয়ে, তাদের মাধ্যমে সেটা আসতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সুতরাং কয়েকজন ব্যক্তি একটা সংস্কার করে দিলেন এটা আমি বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি জনগণের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে তাদের মাধ্যমে সেই সংস্কার আসতে হবে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা অনেক উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, ‘আমরা মনে করি তারা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। এই সরকারের ওপর আমাদের আস্থা রয়েছে, জনগণের আস্থা রয়েছে, সকলেরই আস্থা আছে। কিন্তু অবশ্যই সেটা (নির্বাচন অনুষ্ঠান) সীমিত সময়ের মধ্যেই করতে হবে, একটা সময়ের মধ্যে করতে হবে, যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই করতে হবে। তা না হলে যে উদ্দেশ্যে সেই উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ব্যাহত হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি আবার রিপিট করতে চাই যে, অবশ্যই অতি দ্রুত জনগণের যে চাহিদা, সেই চাহিদাকে পূরণ করবার জন্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কীভাবে একটা নির্বাচন দ্রুত করা যায় এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার করা যায় সেজন্য এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কাজ করবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি।’
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান ও পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে এসে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছিলেন ফখরুল।
১৫ অগাস্ট মির্জা ফখরুল নয়া পল্টনে দলের সমাবেশে জানান, তারা ততদিন অন্তর্বর্তী সরকারকে সমর্থন দেবেন, যতদিন তারা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে।
দুই দিন পর নয়াপল্টনে বিএনপির সমাবেশ থেকেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের দাবি করা হয়।
সেই সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্য থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, ‘ছাত্র-জনতার এ রক্তঝরা বিপ্লবের চূড়ান্ত লক্ষ্য একটি বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ। তাই বিপ্লবের লক্ষ্য বাস্তবায়নে দ্রুততম জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।’
তবে ৮ অগাস্ট শপথ নেয়া ড. ইউনূস সংবিধানের বিধান অনুযায়ী ৯০ দিনে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে কোনো কথা বলছে না। সরকারের মেয়াদ কত দিনের হবে, সে বিষয়েও কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছেন না উপদেষ্টারা। কীভাবে সংবিধানে থাকা ৯০ দিনের সময়সীমার বিষয়টি অগ্রাহ্য করা হবে, সেই ব্যাখ্যা কেউ দিচ্ছে না।
গত ১২ অগাস্ট প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় বৈঠক করে এসে মির্জা ফখরুল বলেছিলেন, ‘আজকে নির্বাচন নিয়ে আমরা কথা বলিনি। আমরা আগেও বলেছি আপনারা জানেন যে, একটা নির্দিষ্ট সময় লাগবে নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে। আমরা তাদেরকে সেই সময়টি আমরা অবশ্যই দিয়েছি। আমরা তাদের সব বিষয়গুলোতে সমর্থন দিয়েছি।’
বিএনপি দৃশ্যত ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচনের দাবি থেকে সরে এসেছে। তারা এতদিন সরকারকে আরও সময় দেয়ার কথা বলছে।
তবে গত ১৫ অগাস্ট নয়া পল্টনের সমাবেশে ফখরুলের বক্তব্য কিছুটা পাল্টায়। সরকার পতন ও নির্বাচন নিয়ে সেদিন তিনি বলেন, ‘এটা ছাত্র-জনতার সরকার, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফসল। আমরা তাদেরকে সহযোগিতা দেব যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে, গণতান্ত্রিকভাবে তারা ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।’