নিজস্ব প্রতিবেদক
পুনর্বহালের দাবিতে সচিবালয়ের অবস্থান নিয়েছেন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে নানা অভিযোগে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা। দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা বলতে সচিবালয়ের ভেতরে প্রবেশ করেছেন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যের পাঁচ প্রতিনিধি দল। বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে তাদের সচিবালয়ের দিকে যেতে দেখা যায়।
এর আগে, বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তারা একটি পদযাত্রা বের করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে তাদের পদযাত্রাটি সচিবালয়ের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের শিক্ষা ভবনের সামনে আটকে দেয় পুলিশ। বর্তমানে তারা রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচী পালন করছেন। পাশাপাশি আলোচনার জন্য ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে গেছে।
সচিবালয়ে যাওয়া প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হলেন- এএসআই সাইফুল, কনস্টেবল সাদ্দান, মহিদুল এস আই মামুন, সিরাজুল হক ও শাজাহান সাজু।
সরেজমিনে দেখা যায়, পুলিশ পরিবারে প্রায় ২২০০ জন সদস্য এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। চাকরি ফিরে পাওয়ার দাবিতে এই সদস্যরা আন্দোলন করছেন। তাদের হাতে বিভিন্ন ব্যানার রয়েছে। তারা পদযাত্রা থেকে সরকারের উদ্দেশ্যে দাবি জানাচ্ছেন, তাদের যেন দ্রুত চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হয়। চাকরি ফিরে পেতে নানা ধরনের স্লোগান দিচ্ছেন চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা।
পুনর্বহাল প্রসঙ্গে তারা ১৫টি বিষয় উত্থাপন করেছেন
১. বিগত স্বৈরাচারী সরকারের আমলে অন্যায়ভাবে প্রায় ২২০০ পুলিশ সদস্যকে চাকুরিচ্যুত করার মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীর নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের মনে চাকুরি হারানোর আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এরই ফলস্বরূপ জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে পুলিশ বাহিনীর কিছু সিনিয়র দানবদের অবৈধ আদেশ পালন করে চাকুরি বাঁচাতে অনিচ্ছা স্বত্বেও গণহত্যার মতো অপরাধ করতে বাধ্য হয়।
২. স্বৈরাচারী সরকারের আমলে পুলিশ বাহিনীর বেশিরভাগ সিনিয়র কর্মকর্তা পুলিশ বাহিনীকে ভয়ংকর দানবে পরিণত করতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে চাকুরিচ্যুত করেছে।
৩. বিভাগীয় মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে ন্যায়সংগত কোনো পথ অনুসরণ করেনি।
৪. মিথ্যা সাক্ষ্য গ্রহণসহ সব কিছুতেই তাদের পক্ষের একতরফা নীতি অনুসরণ করেছে। তারা এমনভাবে মামলা করেছে যেন, আদালত থেকেও কোনোভাবে বিবাদী নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে না পারেন।
৫. বিজ্ঞ আদালত হতে রায় পাওয়ার পরও আমাদের চাকুরিতে পুনর্বহাল করেনি।
৬. স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না থাকা স্বত্বেও রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতাল ও অন্যান্য অনুমোদনহীন হাসপাতাল থেকে ডোপ টেস্টের মাধ্যমে নিরীহ পুলিশ সদস্যদেরকে চাকুরিচ্যুত করেছে। বেশিরভাগ চাকুরিচ্যুত পুলিশ সদস্য ওই দিনই ঢাকা মেডিকেল ও পিজি হাসপাতাল থেকে ডোপ টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট জমা দিলেও তা গ্রহণ করেনি।
৭. ডোপ টেস্টে যারা মোটা অঙ্কের টাকা ঘুষ দিয়েছে বা যারা স্বৈরাচারী সরকারের লোক ছিলেন তাদেরকে চাকুরিতে বহাল রেখেছেন। আর যারা টাকা দিতে পারেনি তাদেরকে চাকুরিচ্যুত করেছেন।
৮. যারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কমেন্ট করেছেন তাদেরকে অন্যায়ভাবে চাকুরিচ্যুত করেছেন।
৯. বিগত স্বৈরাচারী দোসরদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে কিছু পুলিশ সদস্যকে চাকুরিচ্যুত করতে মিথ্যা নাটক সাজিয়ে মাদক ও অস্ত্র দিয়ে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা দিয়েছেন।
১০. পুলিশ বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা নিজেদের পরিচিত লোকের মাধ্যমে মিথ্যা, ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে অসংখ্য পুলিশ সদস্যকে চাকুরিচ্যুত করেছেন।
১১. ২০০৭ সালে সাবেক আইজিপি জনাব নূর মোহাম্মদ স্যার বিভাগীয় মামলার ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন শাস্তি প্রদানের প্রজ্ঞাপন জারি করেন কিন্তু স্বৈরাচারী সরকারের দোসরার আওয়ামী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে ছোটখাটো অপরাধের সর্বোচ্চ শাস্তি চাকুরিচ্যুত করেছেন।
১২. অন্তবর্তীকালীন সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার অব. এম সাখাওয়াত হোসেন মানবিক বিবেচনায় সব পুলিশ সদস্যকে পুনর্বহালের আদেশ প্রদান করার পরও স্বৈরাচারী সরকারের নিয়োজিত দোসররা তা বাস্তবায়নে বাধা প্রদান করছেন।
১৩. অনেক পুলিশ সদস্যকে চাকুরিচ্যুত করার পর যদি বিজ্ঞ আদালতে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে চায় তা হলে গুম খুনের হুমকি দিয়েছেন। এসবের ভয়ে অনেক পুলিশ সদস্য আদালতে মামলা দায়ের করতে পারেনি।
১৪. অনেক পুলিশ সদস্যকে জোর পূর্বক অথবা স্বাক্ষর জাল করে চাকরি হতে সোচ্ছায় অবসর বা বাধ্যতা মূলক অবসর গ্রহণ করতে বাধ্য করেছে।
১৫. পুলিশ প্রধান পি, আর, বি ৮৮৪ প্রবিধান মতে সব চাকুরিচ্যুত পুলিশ সদস্যকে পুনর্বহালের ব্যবস্থা গ্রহণ করার ক্ষমতা থাকলেও বিগত স্বৈরাচারী দোসরদের বাধার কারণে তা প্রয়োগ হচ্ছে না।