নিজস্ব প্রতিবেদক
শেখ মুজিবুর রহমানে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর বাড়িতে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাতে শুরু হওয়া ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ কর্মকাণ্ড এখনও চলছে। তবে বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লুটপাট।
এদিন বিকাল ৫টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে ভিড় একটুও কমেনি, বরং বেড়েছে। এর মধ্যেই কেউ কেউ ইট, লোহার জিনিসপত্র খুলে নিয়ে যাচ্ছেন।
এমনই একজনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো খুলছি ভাঙারির দোকানে বিক্রি করব বলে।
এ সময় ইট হাতে চলে যেতে দেখা যায় অনেককে। ইট সংগ্রহ করতে ভাঙনের কাজে যোগ দিয়েছেন অনেকেই। আরও দেখা যায়, একটি পোড়া গাড়ি ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছে কিছু মানুষ।
আগুনে দেওয়াল পুড়ছে, তবু তারা লোহা ও বিক্রয়যোগ্য যা কিছু আছে, লুট করতে ব্যস্ত।
মাইকিং করে ভবনটি ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে সবাইকে সরে আসতে বললেও অনেকেই পরোয়া করছেন না। এর মধ্যে সেখানে আবার খাবারের দোকান বসিয়েছেন কেউ কেউ।
হায়দার আলী নামে এক দই বিক্রেতা বলেন, আজকেই এখানে প্রথম আসছি। আগে টাউনহলে বিক্রি করতাম। এখানে ভাঙচুরের জন্য মানুষ বেশি, তাই বিক্রিও বেশি হচ্ছে।
শুধু দই নয়, এই ঘটনা ঘিরে গড়ে ওঠা অন্য খাবারের দোকানগুলোতে ভীড় লক্ষ করা গেছে।
৩০ টাকা দরে স্যান্ডউইচ বিক্রি করছেন শফিকুর রহমান। আজই প্রথম এসেছেন কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্যদিন আসব কী করতে? এত মানুষ এখানে আছে বলেই আজ এসেছি।
অনেকে শুধু দেখতে এসেছেন। কেউ বলছেন, ছবি তুলতে এসেছেন। লুটপাটের মাঝে কেউ কেউ চুরি, পকেটমারিও করছে। সব মিলিয়ে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছিল ধানমণ্ডি ৩২ এ শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটিতে।
এমন এক সময়ে ছাত্র-জনতা বাড়িটি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে, যখন জুলাই অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার দেশ থেকে পালানোর ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল (বুধবার) আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় যে, রাতে ভার্চুয়াল এক অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা।
এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সংগঠনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘হাসিনাকে বক্তব্য প্রকাশের সুযোগ দেওয়াকে বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ-বিরোধী জনগণের বিরুদ্ধে ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখি।’
পরে ওইদিনই সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ফেসবুকে আরেক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘আজ রাতে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদের তীর্থভূমি মুক্ত হবে।’
তারপর রাত ৮টার পর থেকেই ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে জড়ো হতে শুরু করে ছাত্র-জনতা। ৯টার দিকে ভবনটির তৃতীয় তলায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। সাড়ে ১০টার দিকে বাড়িটির সামনে একটি ক্রেন নিয়ে আসা হয়, পরে আসে একটি এক্সক্যাভেটর।
এই কর্মকাণ্ড অব্যাহত রয়েছে আজও। বাড়িটি পুরোপুরি গুঁড়িয়ে না দেওয়া পর্যন্ত সেখান থেকে যাবেন না বলে জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধরা। শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ক্ষণে ক্ষণে স্লোগান দিচ্ছেন তারা। শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করারও দাবি জানাচ্ছেন অনেকে।
হাসিনা সরকারের পতনের পর সুসজ্জিত ও সুরক্ষিত বাড়িটিতে গত ৫ আগস্ট প্রথম দফায় অগ্নিসংযোগ করা হয়। বুধবার ব্যাপক ভাঙচুরের পর ভেতরে পোড়ার মতো যা কিছু আছে, তাতে ফের আগুন দেওয়া হয়।
শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬১ সালের ১ অক্টোবর থেকে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর সড়কের এই তিনতলা বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্টে এই বাড়িতেই তাকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
ক্ষমতায় থাকাকালে শেখ হাসিনা বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরের জন্য বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করেন। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট বাড়িটিকে জাদুঘরে রূপান্তরিত করে এবং নাম দেয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর।