নিজস্ব প্রতিবেদক
অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় একসঙ্গে কাজ করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।
পাশাপাশি তারা পারস্পরিক উদ্বেগ ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো নিয়েও আলোচনা করেছেন।
আজ রোববার ওমানের রাজধানী মাস্কাটে ভারত মহাসাগরীয় সম্মেলনের ফাঁকে তৌহিদ হোসেন ও এস জয়শঙ্করের মধ্যে বৈঠকে এসব বিষয়ে আলোচনা হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বৈঠকের আলোচনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলা হয়, “দুই প্রতিবেশী দেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে, তা স্বীকার করেছে উভয়পক্ষ; এবং সেগুলো নিরসনে একযোগে কাজ করার প্রয়োজনীয়তা আলোচনা করেছে তারা।”
ওমানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন মাসকাটে দুই দিনের এ সম্মেলন আয়োজন করছে। এতে প্রথম দিন সম্মেলনের ফাঁকে বাংলাদেশ ও ভারতের শীর্ষ দুই কূটনীতিক বৈঠক করেন।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর এর আগে গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে তারা প্রথম বৈঠক করেছিলেন।
এস জয়শঙ্কর রোববারের বৈঠকের বিষয়ে তার এক্স হ্যান্ডেলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করার কথা তুলে ধরে তাদের একটি ছবি পোস্ট করেছেন। এতে তিনি লেখেন, “আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক ছিল আলোচনার কেন্দ্রে, বিমসটেক নিয়েও আলোচনা হয়েছে।”
ছাত্র-জনতার প্রবল গণ আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলে দায়িত্বে আসে অন্তর্বর্তী সরকার। ৫ অগাস্ট সরকার পতনের পর ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকে সেখানেই আছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তার দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের কয়েকজন গ্রেপ্তার হলেও অধিকাংশই এখনও আত্মগোপনে।
এর মধ্যেই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের চালানো দমন পীড়নকে ‘গণহত্যা’ বিবেচনা করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুবনালে শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। একাধিক মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে।
এরপর প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়ে গত ২৩ ডিসেম্বর ভারত সরকারকে ‘কূটনৈতিকপত্র’ পাঠায় অন্তর্বর্তী সরকার।
ওই সময় ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে ফেরত না পাঠানোর অবস্থানে আছে ভারত সরকার। ঢাকার চিঠির জবাব দিতে দিল্লি কয়েক মাস সময় নিতে পারে–এমন কথাও বলা হয় সেসব প্রতিবেদনে।
শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কে এক ধরনের টানাপোড়েন চলছে। বিচারের জন্য শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়ার পাশাপাশি দিল্লিতে বসে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রচেষ্টার অভিযোগ তার বিরুদ্ধে এনেছে ইউনূস সরকার।
অপরদিকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ভারত সরকার। পাশাপাশি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও অপতথ্য’ এবং ‘অতিরঞ্জিত প্রচারণার’ অভিযোগ বাংলাদেশ সরকার করেছে।
বিভিন্ন বিষয়ে পাল্টাপাল্টি বিবৃতি দেওয়ার পাশাপাশি সীমান্ত ইস্যু এবং শেখ হাসিনার বক্তব্য ঘিরে পাল্টাপাল্টি কূটনীতিক তলবের ঘটনাও ঘটেছে।
এর মধ্যে স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকে বাংলাদেশ নিয়ে নিজের ‘অভিমত ও উদ্বেগ’ জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। বাংলাদেশের বিষয়টি ট্রাম্পের কাছে এক ভারতীয় সাংবাদিক তুললেও, তা এড়িয়ে গেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
বাংলাদেশের ক্ষমতার পালাবদলে যুক্তরাষ্ট্রের কথিত ডিপ স্টেটের ভূমিকা থাকার বিষয়ে ওই প্রশ্নে ট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ডিপ স্টেটের কোনো ভূমিকা এক্ষেত্রে ছিল না। বরং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। এবং এমন কাজ ‘শত শত বছর ধরে চলেছে’।
ট্রাম্প-মোদীর বৈঠকের পর তিন দিনের মাথায় দুই পররাষ্ট্র বিষয়ক প্রধান তৌহিদ ও জয়শঙ্করের বৈঠকে ‘পারস্পরিক উদ্বেগ ও স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে উভয় পক্ষের’ আলোচনার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ বিষয়ে বলা হয়, গত সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে বৈঠকের পর থেকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বৈঠক ও আলোচনার কথা তুলে ধরেন তারা।
এর মধ্যে ছিল ঢাকায় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় ফরেন অফিস কনসালটেশন এবং গত ১০-১১ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে ইন্ডিয়া এনার্জি উইকে বাংলাদেশর জ্বালানি উপদেষ্টার অংশগ্রহণ।
দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ে ১৮-২০ ফেব্রুয়ারি দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় বৈঠকের কথাও তুলে ধরে তারা আশা প্রকাশ করেছেন, “সীমান্ত সম্পর্কিত ইস্যুগুলো সেই বৈঠকে আলোচনা ও সমাধান হবে।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, “গঙ্গা পানি চুক্তি নবায়নের আলোচনা শুরুর যে গুরুত্ব, তার উপর জোর দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি সার্ক স্টান্ডিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠানের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং এক্ষেত্রে ভারত সরকারকে বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন।”
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্মেলনের ফাঁকে ব্রুনাইয়ের দ্বিতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী, ভিয়েতনামের পররাষ্ট্র বিষয়ক ভাইস মিনিস্টার এবং তানজানিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন তৌহিদ হোসেন। সোমবার ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের সূচি রয়েছে তার।