দ্বন্দ্ব ও বিরোধ বাড়ছে জাতীয় নাগরিক কমিটিতে
ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২০ এপ্রিলের মধ্যে দাখিলের নির্দেশ
ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৫

বাংলাদেশে এখনো হুমকি-হামলার শিকার হচ্ছেন সাংবাদিকেরা: সিপিজে

ডেস্ক নিউজ:
গণ আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ছয় মাস পরেও সাংবাদিকেরা তাঁদের কাজের জন্য হুমকি পাচ্ছেন এবং হামলার শিকার হচ্ছেন। একই সঙ্গে খসড়া পর্যায়ে থাকা দুটি অধ্যাদেশ আইনে পরিণত হলে তা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খর্ব করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সোমবার প্রতিবেদনটি সিপিজের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের উচ্চ প্রত্যাশার মধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গত জানুয়ারিতে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫ এবং ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫-এর যে খসড়া তৈরি করেছে, তা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করতে পারে বলেও বাংলাদেশের সংবাদকর্মীরা শঙ্কিত।

গতকাল সোমবার এক বিবৃতিতে সিপিজে বলেছে, যদিও সরকার খসড়া সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশে মানহানি এবং বিনা পরোয়ানায় তল্লাশি সম্পর্কিত বিতর্কিত ধারাগুলো বাদ দিয়েছে বলে জানা গেছে, তবে থেকে যাওয়া কিছু বিধি সাংবাদিকদের নিশানা করতে ব্যবহার হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অধিকার গোষ্ঠীগুলো।

সিপিজে যে ফোরামের সদস্য, সেই গ্লোবাল নেটওয়ার্ক ইনিশিয়েটিভ বলছে, খসড়াটি সরকারকে ব্যবহারকারীদের ডেটা অ্যাক্সেস এবং অনলাইন কন্টেন্টের উপর বিধিনিষেধ আরোপের ‘ঢালাও কর্তৃত্ব’ দেয়। সাংবাদিকরা আরও উদ্বিগ্ন যে, প্রস্তাবিত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ সরকারকে ব্যক্তিগত ডেটা অ্যাক্সেস করার ‘অবারিত ক্ষমতা’ দেবে, যেখানে বিচারিক প্রতিকারের সুযোগ রাখা হয়েছে নামমাত্র।

সিপিজের এশিয়া প্রোগ্রাম সমন্বয়ক বেহ লিহ ই বলেন, “শক্তিশালী সাংবাদিকতা ছাড়া গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে না। সাংবাদিকদের সুরক্ষা এবং তারা যাতে স্বাধীনভাবে প্রতিবেদন করতে পারে, সেই অধিকার নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।

“কর্তৃপক্ষের উচিত, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ন করতে পারে- এমন ধারা সংশোধন করা এবং সংবাদমাধ্যমের ওপর হামলার পেছনে জড়িতদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা।”

সিপিজে বলছে, অধ্যাদেশের বিষয়ে বক্তব্যের জন্য তারা অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য, যোগাযোগ ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলামকে ফোন করার পাশাপাশি বার্তা পাঠালেও কোনো উত্তর পায়নি।

সাংবাদিকদের মারধর, ফৌজদারি তদন্ত এবং তাদের কাজের জন্য হয়রানির কিছু ঘটনাও বিবৃতিতে তুলে ধরেছে সিপিজে।

আক্রমণ

গত ৩ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ অনুসন্ধান করতে গেলে দৈনিক সমকাল পত্রিকার প্রতিনিধি সোহাগ খান সুজনের ওপর হামলা চালায় ১০-১২ জনের একটি দল। সুজনের সঙ্গে আরও তিন সাংবাদিক অনুসন্ধানে গিয়েছিলেন।

সুজন সিপিজেকে বলেন, হামলাকারীরা যখন হাতুড়ি দিয়ে তার বাঁ কানে আঘাত করে এবং ছুরি দিয়ে তার পিঠে আঘাত করে, তখন এক ক্লিনিক মালিক সুজনের পা চেপে ধরেন। এসময় বাধা দিতে গেলে বাংলা টিভির নয়ন দাস, টিভি স্টেশন নিউজ টোয়েন্টিফোরের বিধান মজুমদার অনি ও দেশ টিভির সাইফুল ইসলাম আকাশের ওপরও হাতুড়ি দিয়ে হামলা চালানো হয়। স্থানীয়রা হামলাকারীদের তাড়িয়ে দিলে হামলার অবসান ঘটে।

সুজন সিপিজেকে বলেন, তিনি হত্যাচেষ্টার অভিযোগে পুলিশে অভিযোগ করেছেন।

পালং মডেল থানার ওসি হেলাল উদ্দিন এ বিষয়ে সিপিজেকে বলেছেন, তদন্ত চলছে।

একইদিনে আরেকটি ঘটনা ঘটেছে লক্ষ্মীপুরে। সেখানকার একটি গ্রামে যাওয়ার সময় চার সংবাদকর্মী- খবরের কাগজের মো. রফিকুল ইসলাম, আমার বার্তার আব্দুল মালেক নীরব, দৈনিক আমার সময়ের মো. আলাউদ্দিন ও দৈনিক আলোকিত সকালের মো. ফয়সাল মাহমুদকে বাঁশের লাঠি দিয়ে মারধর করে জনা দশেক মুখোশধারী। ঘটনার শিকার রফিকুল ইসলাম এ ঘটনা সিপিজের কাছে তুলে ধরেছেন।

হামলাকারীরা সাংবাদিকদের ক্যামেরা, মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেয় এবং এ সময় হামলাকারীরা গুলি ছুড়লে আলোকিত সকালের প্রতিনিধি মাহমুদের বাম কান ও পায়ে ছররা গুলি লাগে।

রফিকুল সিপিজেকে বলেন, কর্তৃপক্ষ সন্দেহভাজন চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যাদের মধ্যে দুজন ১০ ফেব্রুয়ারি জামিনে মুক্তি পেয়ে গেছেন।

লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার মো. আক্তার হোসেন ফোনে সিপিজেকে বলেন, আরও সন্দেহভাজনদের ধরতে কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।

হুমকি

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ফ্রিল্যান্স প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শফিউর রহমান সিপিজেকে বলেন, বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বৈঠক নিয়ে ৩০ জানুয়ারি একটি প্রতিবেদন প্রকাশের পর তিনি ইমেইল এবং সোশাল মিডিয়ায় অনবরত হুমকি পাচ্ছেন।

একাধিক ইমেইলে শফিউরকে ‘খুব বেশি দেরি হওয়ার আগেই পিছু হটতে’ বলা হয়েছে। সোশাল মিডিয়ার পোস্টগুলোতে তার কপালে লাল নিশানা করা একটি ছবি জুড়িয়ে দিয়ে সতর্ক করা হয়েছে যে, তার বিরুদ্ধে দেশজুড়ে মামলা দেওয়া হবে।

“এই হুমকির ধরন আমাকে চুপ করানোর একটি পরিকল্পিত প্রচারাভিযানের ইঙ্গিত দেয় এবং আমি যদি সেখানে আমার কাজ চালিয়ে যাই, তবে সত্যি সত্যি খারাপ কিছুর আশঙ্কা করছি।”

সিপিজে বলছে, হুমকির বিষয়ে বক্তব্য জানতে ওই গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা সাড়া পায়নি।

rr
rr

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *