স্পোর্টস ডেস্ক
বাইশগজে ভারত-পাকিস্তানের লড়াই নিয়ে দু’দেশের মানুষের উন্মাদনা বহু পুরোনো। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর মর্যাদার লড়াই হিসেবে দেখা হয় এই ম্যাচকে। পাক-ভারত উন্মাদনার স্বাদ এখন ভারত-বাংলাদেশ ম্যাচে খুঁজে পান অনেকে। দুই দেশের সম্পর্কের সাম্প্রতিক উত্তেজনাও মিশে যাচ্ছে ক্রিকেটের এই উত্তাপে।
আজ (বৃহস্পতিবার) চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুই প্রতিবেশী দেশ মুখোমুখি লড়াইয়ে নামছে। দুই দলেরই প্রথম ম্যাচ এবারের আসরে। সঙ্গে বলা যায় আগের আসরের সেমিফাইনাল পর্বের পুনরাবৃত্তি। ভারত-পাকিস্তান হাই-ভোল্টেজ ম্যাচের চেয়ে গত কয়েকদিনে কোনো অংশে কম আলোচনা হচ্ছিল না এই ম্যাচ ঘিরে। শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে জয় ভিন্ন কিছু ভাবছে না বাংলাদেশ। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় শুরু হবে বিকেল ৩টায়।
ভারত ম্যাচকে সামনে রেখে দুবাইয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত বলেন, ‘জয় দিয়ে শুরু করতে পারলে আত্মবিশ্বাস পাওয়া যায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই দলের প্রধান লক্ষ্য হলো- জয় দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা। এ জন্য আমাদের সেরা ক্রিকেট খেলতে হবে।’
২০২৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের পর থেকে ওয়ানডে ফরম্যাটে পারফরম্যান্স তলানিতে হলোও এবার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শিরোপার স্বপ্ন বাংলাদেশের। গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের পর ১২টি ওয়ানডে খেলে মাত্র ৪টিতে জিতেছে টাইগাররা। সর্বশেষ প্রস্তুতি ম্যাচে পাকিস্তান শাহিনসের বিপক্ষেও পাত্তা পায়নি টিম টাইগার্সরা। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশকে নিয়ে খুব বেশি আশাবাদী নন রিকি পন্টিং, এবি ডি ভিলিয়ার্সের মত কিংবদন্তীরা। তাদের মতে, বড় দলকে হারানোর মত সামর্থ্য নেই বাংলাদেশের।
অবশ্য বেশ ইতিবাচক শান্ত, ‘আমাদের একটা ইউনিট হিসেবে খেলতে হবে। দল হিসেবে খেলতে পারলে যেকোন দিন আমরা যেকোন প্রতিপক্ষকে হারাতে পারি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি টুর্নামেন্টের আটটি দলই ভালো। ভারত, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে আমাদের ভালো স্মৃতি আছে।’
ভারতের বিপক্ষে সাম্প্রতিক রেকর্ড আত্মবিশ্বাস করছে শান্তকে। ভারতের বিপক্ষে সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তিনটিতে জিতেছে টাইগাররা। পাশাপাশি ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামলে বাংলাদেশ শিবির যে সবসময়ই উজ্জীবিত থাকে এটিও কোন গোপন বিষয় নয়। শান্ত বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময় আমরা (ভারতের বিপক্ষে) কয়েকটি ম্যাচ জিতেছি। গত বছর ভারতের বিপক্ষে ঘরের মাঠে আমাদের কিছু ভালো স্মৃতি হয়েছে।’ আরও বলেন, ‘কিন্তু সেটা এখন অতীত। আমি মনে করি আগামীকাল আমরা ভালো খেলতে এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারওে আমাদের জন্য ভালো ম্যাচ হবে।’
এগিয়ে ভারত, তবু আত্মবিশ্বাসী শান্ত
সব মিলিয়ে বাংলাদেশ এবং ভারত এ পর্যন্ত ৪১টি ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে। যার মধ্যে ভারত ৩২টিতে এবং বাংলাদেশ ৮টিতে জিতেছে। একটি ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। কিন্তু আইসিসি ইভেন্টে মাত্র একবার ভারতকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের পর আর কখনও তাদের হারাতে পারেনি টাইগাররা। সবশেষ দুই আইসিসি ইভেন্টে অবশ্য বাংলাদেশ হেরেছে দৃষ্টিকটুভাবে।
২০২৩ বিশ্বকাপের ম্যাচে পুনেতে ভারতকে সেই অর্থে চ্যালেঞ্জই জানাতে পারেনি বাংলাদেশ। বিরাট কোহলির সেঞ্চুরিতে ভর করে স্বাগতিকরা জিতেছিল ৭ উইকেটে। আর ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের জয় ছিল ৫০ রান।
সর্বশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালেও দেখা হয়েছিল দুই দেশের। ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সেই আসরটাই বাংলাদেশের জন্য আইসিসি ইভেন্টে সর্বোচ্চ সাফল্য। তবে স্বপ্নযাত্রার ইতি ঘটেছিল ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে। ঐ আসরের সেমিতে ভারতের কাছে ৯ উইকেটে হেরেছিল বাংলাদেশ। ৮ বছর পর সেই ভারতকেই আবার পাচ্ছে টাইগাররা।
বাংলাদেশ অধিনায়ক সেই ফিরে আসার ম্যাচে অনেকটাই নির্ভর করছেন কন্ডিশনের ওপরে। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে শান্ত বলেন, ‘ভারতকে হারানোর জন্য দুবাইয়ের কন্ডিশন আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে দলকে। দুবাইয়ের ধীর গতির উইকেটকে বাংলাদেশের উইকেটের সাথে বিবেচনা করা হয় এবং সম্প্রতি এই ধরণের উইকেটে খেলতে বেগ পেতে হয়েছে ভারতকে।’
শান্ত বলেন, ‘আমি মনে করছি ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই আমাদের ভাল খেলতে হবে। কারণ আমি মনে করি গত কয়েক বছর ধরে আমরা এই ফরম্যাটে যেভাবে খেলেছি, তাতে আমার মনে হয় আমাদের একটি ভালো দল আছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কন্ডিশনও একই রকম। আমরা নিজেরা পুরোপুরি প্রস্তুত বলে আমি সত্যিকারার্থেই বিশ্বাস করি। আগামীকালের ম্যাচে ভাল কিছু হবে আশা করছি।’