মোঃ জাকির হোসেন: সর্বস্তরের মানুষের হৃদয় জয় করা একজন সংগীতশিল্পীর রাষ্ট্রীয় মর্যাদা যে কত উঁচু হতে পারে, উপমহাদেশের কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী লতা মঙ্গেশকরের পরিণত বয়সের প্রয়াণে তার প্রমাণ পাওয়া গেল। তার মৃত্যুতে ভারতজুড়ে দুদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে গতকাল পালিত হয়েছে অর্ধদিবস ছুটি। শোকে মুহ্যমান গোটা দেশ। শুধু ভারত কেন, বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠাতেও রয়েছে তার স্থান। এ দেশের মানুষও তার মৃত্যুতে কেঁদেছে। বাংলাদেশের সংবাদপত্রগুলোতেও তার মৃত্যু সংবাদ পরিণত হয়েছে শীর্ষ খবরে। হবে নাই বা কেন? লতা মঙ্গেশকর ছিলেন এক ‘জাদুকরি’ কণ্ঠের অধিকারী শিল্পী। কতটা জাদুকরি তা তার গানের শ্রোতামাত্রই জানেন। ভারতীয় কবি ও গীতিকার জাভেদ আখতারের বর্ণনায় তা ভাষায় রূপ পেয়েছে-‘যদি পৃথিবীর সব সুগন্ধি, সব চাঁদের আলো আর সবটুকু মধু একত্র করা হয়, তারপরও তা দিয়ে লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠের মতো কিছু তৈরি হবে না।’ ভারতের আরেক কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী মান্না দে বলেছিলেন, লতা মঙ্গেশকরের কণ্ঠে ঈশ্বর বাস করেন।’ অনেক শিল্পীর কাছেই তিনি ছিলের সুরের দেবী বা সুরের সরস্বতী।
লতা মঙ্গেশকরের গানে মুগ্ধ ব্যক্তিরা ছাড়াও বাংলাদেশের মানুষ আরও একটি বিশেষ কারণে এই সুরসম্রাজ্ঞীকে স্মরণ করবেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে তহবিল সংগ্রহ এবং আন্তর্জাতিক জনমত গঠনে তিনি রেখেছিলেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এ দেশের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রেও প্লে-ব্যাক করেছিলেন তিনি। অর্থাৎ তিনি স্থান স্থান করে নিয়েছেন বাংলাদেশের জন্ম ইতিহাসে।
হিন্দি, মারাঠি ও বাংলাসহ বহু ভাষায় গান করেছেন লতা মঙ্গেশকর। সেসব গান আজও যেমন মানুষের মুখে মুখে ফেরে, ভবিষ্যতেও ফিরবে। এভাবেই মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকেন একজন শিল্পী। লতা মঙ্গেশকর ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা ‘ভারতরত্ন’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন। তবে নিজের অমর গানগুলোর মাঝেই বেঁচে থাকবেন তিনি। সারা পৃথিবীতে তার মাপের একজন সংগীত শিল্পীর জন্ম হয় কালেভদ্রে। লতা মঙ্গেশকরের মৃত্যুতে এ উপমহাদেশের মানুষ হারালো একজন সংগীত নক্ষত্রকে, যার অভাব কখনো পূরণ হবে কিনা, আমরা জানি না। আমরা তার মৃত্যুতে শোকাচ্ছন্ন।
মোঃ জাকির হোসেন, সম্পাদক, সিটিনিউজ সেভেন ডটকম