স্টাফ রিপোর্টার:
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের উত্তাপ এসে লেগেছে বাংলাদেশের গমের বাজারে। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কথা। আর সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বলছে, আমদানি প্রায় স্বাভাবিক। যুদ্ধের কারণে গম আমদানিতে বাংলাদেশে এখনো কোনো প্রভাব পড়েনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে স্বাভাবিক রয়েছে আমদানি। তাই বাজারে গমের দাম বাড়ার যৌক্তিক কোনো কারণ নেই।
যুদ্ধ শুরুর পর শুধু রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে জাহাজীকরণ বন্ধ রয়েছে। তবে আগে থেকে জাহাজীকরণ হওয়া পণ্য আমদানি হচ্ছে। এক্ষেত্রে এত তাড়াতাড়ি দেশে গমের বাজারে প্রভাব পড়ার কথা নয় বলে মন্তব্য সংশ্লিষ্টদের।
এদিকে ভোক্তাদের অভিযোগ, আগেভাগে অনেকটা ‘গুজব’ ছড়িয়ে দাম বাড়াচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
এ অভিযোগ উড়িয়ে ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক বাজারের কথা বলছেন। আবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গুজব তৈরি করে যদি দাম বাড়ানো হয়, সেক্ষেত্রে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের বৃহত্তম পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গত সপ্তাহে মণপ্রতি গম বিক্রি হয়েছে এক হাজার ১২০ টাকায়। ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে একই বাজারে মণপ্রতি গম বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২২০ থেকে এক হাজার ২৩০ টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে গমের দাম বেড়েছে মণপ্রতি ১০০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, যুদ্ধ শুরুর আগে প্রকারভেদে আন্তর্জাতিক বাজারে টনপ্রতি গমের দাম ছিল ৩০০-৩৬০ ডলার। যুদ্ধ শুরুর পর কানাডা-অস্ট্রেলিয়াসহ শীর্ষ গম উৎপাদনকারী বিভিন্ন দেশ দাম বাড়িয়ে ৪০০-৪৫০ ডলার করেছে।
তবে কাস্টম ও আমদানির সঙ্গে জড়িত সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সূত্র জানায়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে তার প্রভাব দেশের গমের বাজারে পড়েনি। এর মধ্যে আবার বর্তমানে ইউক্রেন-রাশিয়া ছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে যুদ্ধের আগে যেসব গম জাহাজীকরণ হয়েছে, সেগুলো আমদানির প্রক্রিয়ায় রয়েছে। এত তাড়াতাড়ি দাম বাড়া মানে এটি ব্যবসায়ীদের এক ধরনের কারসাজি।
দেশে মোট চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ গম বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি হয়। রাশিয়া, ইউক্রেন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, তাঞ্জানিয়া, কেনিয়া, আর্জেন্টিনাসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসব গম আসে। এর মধ্যে যুদ্ধ লেগেছে শুধু দুটি দেশে। বাকি দেশ থেকে চাহিদার বিপরীতে গম আমদানি করা যাবে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্রের তথ্যমতে, শুধু চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৬ লাখ ৭৫ হাজার ২৭০ টন গম আমদানি হয়েছে। এর মধ্যে ইউক্রেন থেকে এসেছে ৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫৮৭ টন এবং রাশিয়া থেকে এসেছে ৩ লাখ ২ হাজার ৮৩৩ টন। বাকিগুলো অন্যান্য দেশ থেকে এসেছে। সংশ্লিষ্টরা এই পরিসংখ্যানকে এ পর্যন্ত চাহিদার সঙ্গে স্বাভাবিক বলে উল্লেখ করছেন। একই সঙ্গে ভবিষ্যতে তারা রাশিয়া-ইউক্রেনের বিকল্প দেশ থেকে গম আমদানির জন্য ব্যবসায়ীদের পরামর্শ দিচ্ছেন। এতে দেশে ভবিষ্যতেও গমের সংকট হবে না।
কেন্দ্রটির উপ-পরিচালক (ডিডি) কৃষিবিদ নাছির উদ্দীন বলেন, গম আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। এত তাড়াতাড়ি বাজারে দাম বাড়ার কথা নয়। শুধু রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর ওই দুটি দেশ থেকে জাহাজীকরণ বন্ধ রয়েছে। এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা বিকল্প দেশ থেকে আমদানি করতে পারবেন। তাহলে ভবিষ্যতেও দাম বাড়ার সম্ভাবনা কম।
গমের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আমদানিকারক ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের প্রেসিডেন্ট মাহবুব আলম বলেন, যুদ্ধের কারণে এই সংকট হয়েছে। কানাডা-অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ দাম বাড়িয়েছে। তারা টনপ্রতি প্রকারভেদে ১০০ ডলার পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এজন্য দেশের বাজারে দাম বেড়েছে। তবে বিকল্প উৎস দেখে আমদানি করতে হবে।
আগেভাগে বাজারে গমের দাম বাড়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, আমরা বিষয়টি তদারকি করছি। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। কারসাজি করে দাম বাড়ানো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা চালায় রাশিয়া। টানা কয়েকদিন ধরেই দুপক্ষের মধ্যে চলছে লড়াই। এরই মধ্যে বেলারুশে শান্তি সংলাপে বসেছিল রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধি দল। তাদের আলোচনা শেষ হয়েছে। তবে কোনো সমাধান না আসায় দ্বিতীয় দফা বৈঠকে সম্মত হয়েছে দুপক্ষই।
অপরদিকে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা নিষেধাজ্ঞার ধাক্কা টের পেতে শুরু করেছে রাশিয়া। বৈশ্বিক ব্যাংকিং পেমেন্ট সিস্টেম সুইফট থেকে বাদ পড়ার পরপরই দেশটির মুদ্রা রুবলের রেকর্ড দরপতন হয়েছে।
সিটিনিউজ সেভেন ডটকম//আর//