মোঃ জাকির হোসেন:
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার বাজার মনিটর করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার ঐতিহাসিক ৭ মার্চ উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ কথা বলেছেন।
বাজার মনিটরিংয়ের কথা আমরা সব সময়ই শুনে আসছি। কিন্তু বাস্তবে বাজারে এর কোনো প্রভাব লক্ষ করা যায়নি। তবে এবার খোদ প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়ায় পরিস্থিতির উন্নতি হবে আশা করা যায়। বস্তুত বাজারে নজরদারির যে প্রয়োজন, প্রধানমন্ত্রী নিজেও সেটা অনুভব করছেন। তিনি বলেছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়ে গেলে এখানেও সে প্রভাবটা পড়ে; আর কিছু সুবিধাভোগী শ্রেণি রয়েছে এ সুযোগটা নেওয়ার জন্য। আমরা মনে করি, কেউ যাতে এ সুযোগটা নিয়ে বাজারে কারসাজি করে দ্রব্যমূল্য বাড়িয়ে দিতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।
জানা যায়, শুধু বাজার মনিটরিং নয়, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এবং আসন্ন রমজানের কথা মাথায় রেখে বাজার নিয়ন্ত্রণে বিভিন্ন পণ্যের আমদানি বাড়ানোসহ সাতটি উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়। এসব উদ্যোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য-সমুদ্র, স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পণ্য খালাস করা; ফেরি পারাপারে পণ্য পরিবহণে অগ্রাধিকার ও নিত্যপণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রে জেলা পুলিশের সহায়তা; টিসিবির কার্যক্রমে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে সার্বিক সহযোগিতার নির্দেশ প্রদান প্রভৃতি। আমরা এসব উদ্যোগের যথাযথ বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি।
প্রকৃতপক্ষে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং রমজান ঘনিয়ে আসার অনেক আগে থেকেই বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, ভোজ্য তেল প্রভৃতি পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি এর একটি কারণ হলেও একমাত্র কারণ নয়। দেখা যায়, দেশের প্রধান খাদ্যশস্য চালের ভরা মৌসুমেও, এমনকি দাম সহনীয় রাখতে চাল আমদানি করার পরও বাজারে এর দাম ঊর্ধ্বমুখী। বস্তুত বাজারে সব ধরনের নিত্যপণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী, যার পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। এতে স্পষ্ট বোঝা যায়, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সংকট সৃষ্টি করে অনেক পণ্যের দাম বাড়ানো হচ্ছে।
কিন্তু এখন পর্যন্ত এসব সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ দেশে বিভিন্ন পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে থাকে। আবার সাধারণ মানুষও দামবৃদ্ধির আশঙ্কায় আগেভাগে বেশি পরিমাণে পণ্য কিনে মজুত করে। এ কারণেও বাজারে সৃষ্টি হয় সংকট। কাজেই মানুষকেও এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
সরকার গৃহীত উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে বাজারে অস্থিরতার তাৎক্ষণিক সমাধান হয়তো মিলবে। তবে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য সংকট এবং বাজার কারসাজি সমস্যার সমাধানে প্রয়োজন দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো। প্রধানমন্ত্রীও দেশব্যাপী খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি পড়ে না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। আমরাও মনে করি, এ বিষয়টিতে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে এবং কৃষকদের উৎসাহিত করে দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব।
মোঃ জাকির হোসেন, সম্পাদক, সিটিনিউজ সেভেন ডটকম