রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির নয় বছর
এপ্রিল ২৪, ২০২২
মোমবাতি জ্বালিয়ে রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিকদের স্মরণ
এপ্রিল ২৪, ২০২২

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ১৩ কিলোমিটারেই যত ভোগান্তি

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:
ঈদে ভোগান্তির অপর নাম ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধুসেতু মহাসড়ক। উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলসহ ২৬টি জেলার মানুষ চলাচল করে এ সড়ক দিয়ে। ফলে ঈদে বাড়তি পরিবহনের চাপে পড়ে মহাসড়কটি।

গত বছর ঈদে করোনার কারণে ঢাকা না ছাড়ার নির্দেশ থাকলেও ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৫২ হাজার ৭৬৮টি যানবাহন পারাপার হয় বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে। এবার কোন নিষেধাজ্ঞা নেই, তাই যানবাহনের চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ফলে এবার ঈদে যানজটের কবলে পড়তে পারে উত্তরবঙ্গগামী ঘরমুখো মানুষ।

জানা গেছে, মহাসড়কটির এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার সড়ক এখনও দুই লেনে রয়েছে। এছাড়া সড়কের দুই পাশের বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ ও উঁচু নিচু থাকায় স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করতে পারেনা। এতে যানজটের সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও সেতু কর্তৃপক্ষ খানাখন্দে কুচি পাথর ছিটিয়ে দায় সারছে। যা ভালোর চেয়ে খারাপই হচ্ছে। এ কারণে বেড়ে যাচ্ছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা।

কুচি পাথর দেওয়ার ফলে মোটরসাইকেলের চালকরা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। তবে মহাসড়কের এলেঙ্গা-রংপুর চারলেন প্রকল্পের কাজ সিরাজগঞ্জের বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম অংশ থেকে শুরু হলেও এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব পর্যন্ত কাজ শুরু করা হয়নি। এছাড়া গাজীপুর চন্দ্রা থেকে কালিহাতীর এলেঙ্গা পর্যন্ত চারলেনের কাজ প্রায় শেষের দিকে। তবে মির্জাপুরের গোড়াই ফ্লাইওভারের কাজ এখনও চলমান রয়েছে।

এদিকে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের এলেঙ্গা হতে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব পর্যন্ত দুইলেনের সড়কে তিনটি লিঙ্করোড রয়েছে। একটি এলেঙ্গা থেকে ময়মনসিংহ-জামালপুরগামী, এলেঙ্গা থেকে ভূঞাপুর-তারাকান্দিগামী রোড এবং বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব গোলচত্ত্বর থেকে ভূঞাপুর-তারাকান্দি রোড সড়ক। এই লিঙ্করোডের পরিবহন মহাসড়কে প্রবেশের সময় একপাশের পরিবহন আটকে রাখা হয়। এতে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে এলেঙ্গা হতে সেতু-পর্যন্ত সড়কে সৃষ্টি হওয়া খানাখন্দের কারণে দুর্ঘটনার কবলে পড়ছে চালকরা।

অন্যদিকে সিরাজগঞ্জের অংশের বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে সড়ক প্রশস্তের কাজ। সিরাজগঞ্জের ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতুর পাশে নতুন করে আরেকটি সেতু তৈরি কাজও চলমান রয়েছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটি দিয়েই এখনও যানবাহন চলাচল করছে এজন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতুটি। সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ ছাড়াও ঝিনাইগাতি লিংকরোড, সায়েদাবাদ, মুলিবাড়ী, কড্ডা, ভূইয়াগাতি ও চান্দাইকোনা লিংকরোডসহ কয়েকটি এলাকার লিংক রোডের কারণেও ঈদযাত্রায় যানজটের সৃষ্টি হয়। আগামী ২৫ এপ্রিল নলকা সেতু খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে। যদি সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। তাহলে কিছুটা স্বস্তির বার্তা রয়েছে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের জন্য।

এদিকে আজ শনিবার ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধুসেতু মহাসড়কের মির্জাপুরের গোড়াই এলাকায় ফ্লাইওভার পরিদর্শন করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো.নজরুল ইসলাম।

এ বিষয়ে মো.নজরুল ইসলাম বলেন, ঈদের আগেই ২৫ এপ্রিল ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইলের গোড়াই ফ্লাইওভার ও সিরাজগঞ্জের নলকা ব্রিজ যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। যাতে করে ঈদযাত্রায় মহাসড়কে যানজট সহনীয় পর্যায়ে থাকে। যদিও এসব কাজের মেয়াদ এখনো শেষ হয়নি। বিশেষ বিবেচনায় ঈদের আগেই খুলে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে এসব অংশে যানজট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিকল্প রাস্তাগুলোতে যদি গাড়িগুলো ডাইভার্ট করে দেওয়া যায়। তাহলে মহাসড়কে ট্রাফিক চাপ কমবে।

তিনি আরও বলেন, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আমাদের একটি সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুম থাকবে। বিভিন্ন পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা থাকবে। এছাড়াও মহাসড়কে পুলিশের পক্ষ থেকেও বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পুলিশের সঙ্গেও আমরা কিছু কিছু বিষয় সমন্বয় করছি। ২ বছর করোনার পরিস্থিতির পরে এ বছর ঘরমুখো মানুষের চাপ বৃদ্ধি পাবে। এ বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা প্রস্তুত রয়েছি।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইকবাল হোসেন বলেন, টাঙ্গাইল থেকে কোন ধরনের ফিটনেসবিহীন গাড়ি ঈদে চলাচল করবে না। সমিতির আওতাধীন ফিটনেসবিহীন কোন পরিবহন নেই। ঈদে মূল যানজটের সৃষ্টি হয় সিরাজগঞ্জ অংশে। হাটিকুমরুল, কড্ডার মোড়, নলকা ব্রিজের কারণে গত বছর যানজটের সৃষ্টি হয়েছিল। যানজট হলে পরিবহনে ব্যবসা হয় না। এছাড়া যানজটের কারণে শিশু ও নারীরা ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে মহাসড়কে যানজট নিরসনে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।

মহাসড়ক উন্নতিকরণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার জয়েন্ট ভেঞ্চারের ব্যবস্থাপক এখলাছ উদ্দিন বলেন, আগামী ২৫ এপ্রিল নলকার নতুন সেতুর এক লেন খুলে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যেই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানের খানাখন্দগুলো সংস্কারের কাজ শেষ করা হয়েছে। ঈদযাত্রায় সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ বন্ধ রাখা হবে।

জয়দেবপুর-এলেঙ্গা চারলেন প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার অমিত কুমার চক্রবর্তী বলেন, মহাসড়কে প্রশস্তকরণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। মির্জাপুরের ফ্লাইওভারটি খুলে দেওয়া হবে। ঈদযাত্রায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়েও কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুর প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পী বলেন, স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ঈদযাত্রায় যানবাহন কয়েকগুন বেড়ে যায়। স্বাভাবিক সময়ে গড়ে প্রতিদিন উভয়পাড়ে ১৭-২০ হাজার পরিবহন বঙ্গবন্ধু সেতু পারাপার হয়। এতে সেতুর ৬ থেকে ৭টি টোলপ্লাজায় টোল আদায় করা হয়। তবে ঈদের আগে মহাসড়কে যানজট নিরসনে সেতুর উভয় পাশে ১৮টি টোল পয়েন্ট চালু করে টোল আদায় করা হবে।

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আতাউর রহমান বলেন, যানজট নিরসনে সড়কে সব সময় কাজ করে যাবে হাইওয়ে পুলিশের সদস্যরা। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। আশা করি এবার ঈদ যাত্রায় মানুষের ভোগান্তি হবে না।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, এবার ঈদে মহাসড়কে যানজট এড়াতে ভিন্ন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে মহাসড়কের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সড়ক অধিক বিবেচনায় রেখে সেখানে অস্থায়ী রোড ডিভাইডার স্থাপন করা হবে। এবার সড়কে ৭১০ জন পুলিশ সদস্য সব সময় কাজ করবে।

 

সিটিনিউজ সেভেন ডটকম//আর/

rr
rr

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *