স্টাফ রিপোর্টার:
রিকশা-ইজিবাইক চালানো, পুরনো কাপড় ফেরি করে বিক্রি করা, দোকানে কাজ করার পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের তালা কেটে চুরি করতো একটি চক্র। চুরির সাত দিন আগে চক্রের দলনেতা সহযোগীদের নিয়ে টার্গেট করা দোকান রেকি করতেন। আর চুরির ৩ দিন আগে গ্রুপের এক সদস্যকে পাঠানো হতো টার্গেট দোকানটি পর্যবেক্ষণ করতে।
পরে সুযোগ বুঝে টার্গেট করা দোকানের তালা কেটে ভেতরে ঢুকে নগদ টাকাসহ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে চম্পট দিতো চক্রটি। এমন একটি চোর চক্রের সন্ধান পেয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। পরে চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রোববার ঢাকার মাতুয়াইল, ডেমরা, নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে চক্রের দলনেতাসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, দলনেতা মো. বাবু, তার সহযোগী আলমগীর হোসেন মালু, মো. রুবেল এবং মো. ইসহাক ওরফে সাগর।
ডিবি বলছে, বাবুর নেতৃত্বে এই গ্রুপে কাজ করে ১০/১১ জন। যাদের অধিকাংশই দীর্ঘদিন চুরির সাথে জড়িত। গ্রেপ্তার সাগর ৫-৬ মাস আগে গ্রুপটিতে যোগ দেন। তিনি ইজিবাইক চালানোর পাশাপাশি বিভিন্ন নাচের প্রোগ্রামে ড্যান্সার হিসেবে অংশগ্রহণ করতেন। পরে চক্রের সদস্য তার আপন ভাই আকাশের মাধ্যমে এই গ্রুপে যোগ দেন।
ডিবি জানায়, দলনেতা বাবুর সাথে এই গ্রুপের অধিকাংশ সদস্যের ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিচয়। তারা চট্টগ্রাম শহরের ফিশারিঘাট এলাকায় অনেক আগে থেকে মাছ চুরির সাথে জড়িত। এছাড়াও তারা চট্টগ্রাম এবং কুমিল্লা এলাকায় চুরি করে থকে।
ডিবি সূত্র জানায়, গত ১৭ অক্টোবর বংশালের মাদ্রাসা মার্কেটে একটি দোকানে তালা কেটে দুর্ধর্ষ চুরির ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা তদন্তের একপর্যায়ে এই চক্রের বিষয়ে জানতে পারেন গোয়েন্দারা। পরে অভিযান চালিয়ে চক্রের ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় এবং তাদের দেয়া তথ্যে সিমসহ ও সিম ছাড়া ১৫টি মোবাইল ফোনসেট ও সিম ছাড়া, ২টি তালা কাটার, ৪টি তালা, ১০টি চাবি, নাট-বল্টু, ২টি সেলাইরেঞ্জ, ৫টি স্ক্রু ড্রাইভার, ১টি রেদ, সরঞ্জামাদি বহন করার ২টি ব্যাগ, নগদ ৭৮ হাজার টাকা, ২টি ছাতা, ১টি চাদর, ১টি টুপি, ২টি হাতুড়ি, ১টি বড় কেচি, ২টি প্লাস, ১টি ডাল সেলাইরেঞ্জ উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে চক্রটি জানিয়েছে, তারা হাইড্রোলিক বোল্ট কাটার দিয়ে দোকানের সাঁটারের তালা এবং কেচি গেইটের তালা কেটে ওই দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে। পরে দোকানের ক্যাশ বাক্সে রাখা নগদ টাকা লুট করে নিয়ে যায় তারা।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ডিবি জানায়, চক্রটি চুরির সাত দিন আগে টার্গেট করা দোকান রেকি করে। আর চুরির ৩ দিন আগে গ্রুপের এক সদস্যকে পাঠানো হয় টার্গেট দোকানটি পর্যবেক্ষন করতে। ঘটনার দিন চক্রের ৭/৮ জন চুরিতে সরাসরি অংশগ্রহণ করে। ২ জনের কাজ থাকে দূর থেকে পথচারী পর্যবেক্ষণ করা এবং প্রয়োজনে তাদের সাথে কথা বলে তাদেরকে ব্যস্ত রাখা।
দোকানের সামনেও ২ জন একইভাবে পথচারীদের পর্যবেক্ষণ করে। দোকানের দুই পাশে দুইজন চাদর অথবা ছাতা ধরে থাকে। তখন একজন হাইড্রোলিক কাটার দিয়ে সাঁটার এবং কেচি গেইটের তালা কেটে একজনকে ভেতরে ঢুকিয়ে দেয়। দুই পাশে দুইজন চাদর বা ছাতা ধরে রাখে যাতে দুই পাশ থেকে দেখা না যায় ভেতরে কী হচ্ছে। চুরি শেষে কাটা তালা নিজের ব্যাগে ভরে নেয় এবং দোকানে নতুন তালা লাগিয়ে দেয় যেন, তৎক্ষনাত কারো মনে সন্দেহ না জাগে যে সেখানে চুরি হয়েছে।
ডিবি জানায়, এই চোর চক্রের সদস্যরা ২ মাস আগে ঢাকার মাতুয়াইল এবং ডেমরার কোনাপাড়া এলাকায় দুটি বাসা ভাড়া নেয়। মাতুয়াইলে দলনেতা বাবুসহ গ্রেপ্তার আলমগীর হোসেন মালু এবং রুবেল এবং কোনাপাড়ার বাসায় গ্রেপ্তার সাগরসহ বাকি ৬ জন ওঠে। চুরির কাজে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ডেমরার কোনাপাড়ার বাসায় থাকতো এবং দলনেতা বাবু অপারেশনাল প্ল্যান করে সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করতো। গ্রুপের প্রত্যেকেই নিজেদের মধ্যে ইমোতে যোগাযোগ রক্ষা করতো। গ্রুপটি এপর্যন্ত ৪০-৫০ টি চুরি করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দাদের জানিয়েছেন গ্রেপ্তারকৃতরা।
ডিবি জানায়, এসব চক্র স্বর্ণের দোকান, কাপড়ের দোকান, বিকাশের দোকান, ফলমুলের দোকান ও হার্ডওয়্যারের দোকনে চুরি করে থাকে। চুরি করা অর্থ বা মালামালের ২০ শতাংশ আগেই সরিয়ে ফেলে। পরে ২০ শতাংশ অর্থ বা মালামাল দলনেতা বাবু, শরিফ, সুমন, শাহেদ এবং যারা দোকানের ভেতরে প্রবেশ করে তারা নেয়। বাকি ৮০ শতাংশ অর্থ বা মালামাল সবার মাঝে সমান ভাবে ভাগ করা হয়।
গোয়েন্দা লালবাগ বিভাগের ডিসি মশিউর রহমান বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের দুই দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী এ ধরনের আরও ৫-৬ টি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। এসব চক্রকে শনাক্তসহ গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
সিটিনিউজ সেভেন ডটকম//আর//