মোঃ জাকির হোসেন:
দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান দুই উৎস রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় টানা দুই মাস হ্রাস পাওয়ায় রিজার্ভ নিয়ে দুশ্চিন্তা আরও বেড়েছে। আমদানি ব্যয় ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধে এমনিতেই রিজার্ভ নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স কমায় রিজার্ভে চাপ আরও বেড়েছে।
এদিকে ৮ নভেম্বরের মধ্যে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের বড় অঙ্কের দেনা একসঙ্গে পরিশোধ করতে হবে। এতে রিজার্ভ আরও কমবে। উল্লেখ্য, বর্তমানে রিজার্ভ রয়েছে সাড়ে ৩৫ বিলিয়ন ডলার। এটি ৩৪ বিলিয়ন ডলারের ঘরে নেমে আসতে পারে। এ পরিস্থিতিতে কীভাবে রিজার্ভের পরিমাণ বাড়ানো যায়, সেই পথটি খুঁজে বের করতে হবে।
রপ্তানি আয় কমার প্রবণতা শুরু হয় গত সেপ্টেম্বরে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবরে রপ্তানি আয় গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় প্রায় ৮ শতাংশ কমেছে। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সামনের দিনগুলোতে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৈশ্বিক মন্দা না কাটলে রপ্তানির বাজার চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
রপ্তানিকারকরা বিকল্প বাজার ধরার চেষ্টা করছেন; কিন্তু এ ধরনের বাজারও খুব সীমিত। কারণ সব দেশই এখন মন্দাকবলিত। এ অবস্থায় সরকারের উচিত, দেশের রপ্তানিকারকদের সমস্যাগুলোয় অধিকতর নজর দেওয়া। তাদের গ্যাস-বিদ্যুৎ নিশ্চিত করাসহ প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে হবে। অন্যদিকে মন্দার কারণে বৈদেশিক শ্রমবাজার সংকুচিত হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে। সেক্ষেত্রে অনেক প্রবাসী কর্মী চাকরি হারাতে পারেন।
এর ফলে রেমিট্যান্সের প্রবাহ আরও কমে যেতে পারে। এতে ডলারের বাজারে অস্থিরতা আরও বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়ার অর্থ হলো, ডলারের দাম আরও বৃদ্ধি পাওয়া। এতে দ্রব্যমূল্য আরও বেড়ে যেতে পারে। ব্যবসায়ীরা এলসি খুলতে আরও বেশি সমস্যায় পড়তে পারেন। সব মিলে সামগ্রিক অর্থনীতিতে পড়বে এর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব।
প্রশ্ন হলো, এ পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী? বিভিন্ন দেশে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় সেসব দেশে রপ্তানি আদেশও কমে গেছে। এতে এ মুহূর্তে আমাদের রপ্তানি আয় বৃদ্ধির সম্ভাবনা কম। তাই রেমিট্যান্সের ওপরই আমাদের জোর দিতে হবে বেশি। বৈদেশিক শ্রমবাজারগুলো ধরে রেখে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স প্রেরণে প্রবাসী কর্মীদের উৎসাহিত করতে হবে। রিজার্ভে চাপ কমানোর একটি ভালো উপায় হলো, আমদানি ব্যয় কমানোর উদ্যোগ নেওয়া। ভোগ্যপণ্যের ক্ষেত্রে দ্রুততম সময়ে আমদানি ব্যয় কমানোর কাজটি কঠিন হলেও বিলাসী পণ্যের ক্ষেত্রে আমদানি ব্যয় কমানো সম্ভব।
এ ব্যাপারে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আমদানি ব্যয় কমানোর আর কী কী সুযোগ আছে, সেগুলো খতিয়ে দেখতে হবে। এ সময়ে আমদানিনির্ভর নতুন বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত করার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া যেতে পারে। অনুৎপাদনশীল খাতে বৈদেশিক মুদ্রার খরচ বন্ধ করতে হবে কঠোরভাবে। এসব পদক্ষেপে পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হবে, আশা করা যায়।
মোঃ জাকির হোসেন, সম্পাদক, সিটিনিউজ সেভেন ডটকম