মোহাম্মদ হানিফ মানুষের হৃদয়ে বেঁচে থাকবেন আজীবন : প্রধানমন্ত্রী
নভেম্বর ২৮, ২০২২
রাজধানীতে মাদকবিরোধী অভিযানে গ্রেপ্তার ৪০
নভেম্বর ২৮, ২০২২

নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট: স্থবির চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
নৌযান শ্রমিকদের আচমকা ধর্মঘটে স্থবির হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরসহ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন সেক্টর। লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে নদীপথে পণ্য পরিবহন স্থবির হয়ে পড়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা।

শনিবার (২৬ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে নৌযান শ্রমিকদের এই লাগাতার কর্মবিরতি। এর ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পণ্য খালাস কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

জানা যায়, শুরুতে সব জাহাজ এই কর্মসূচিতে যোগ না দিলেও গতকাল রোববার সকাল থেকে মূলত সব লাইটারেজ শ্রমিক কাজ বন্ধ করে আন্দোলনের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন। ফলে বহির্নোঙরে অপেক্ষমাণ মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য খালাসে নিয়োজিত লাইটার জাহাজ, অয়েল ট্যাংকারসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।

নদীপথে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর থেকে দেশের ৬৪টি রুটে পণ্য পরিবহন করে। এই পণ্যের মধ্যে রয়েছে সিমেন্ট, সিরামিকস ও ইস্পাত শিল্পের কাঁচামাল, সার, কয়লা ও ভোগ্যপণ্য। লাইটার জাহাজে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম থেকে সারাদেশে নদীপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ হয়ে গেছে।

নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ চট্টগ্রামের সদস্য সচিব মো. নূর ইসলাম জানান, যতদিন ১০ দফা দাবি না মানবে ততদিন শ্রমিকদের আন্দোলন চলবে।

বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ ইছা মিয়া বলেন, শ্রমিকদের সর্বনিম্ন বেতন ২০ হাজার টাকা, মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লাখসহ ভারতের বন্দরে শোরপাস নিয়ে ১০ দফা দাবি আমাদের। এসব দাবি মানা হলে আমরা কাজে যোগ দেবো। ভারতীয় বন্দরের জাহাজ থেকে নামতে দেয় না। এতে আমাদের প্রায় ১৫ জন মারা গেছে কিছু দিন আগে। আর কত মৃত্যু আমরা সহ্য করবো? এসব বিষয় নিয়ে আমরা কর্মবিরতিতে নেমেছি। মূলত আমরা আন্দোলন সংগ্রাম পরিষদের ব্যানারে এ কর্মবিতরতি পালন করছি।

বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নবী আলম বলেন, বন্দরের বহির্নোঙরে রাখা বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে সাধারণ শ্রমিকরা। একইসঙ্গে মাঝিরঘাট ও সদরঘাট এলাকার ১৮টি বেসরকারি ঘাটেও লাইটার জাহাজে করে পণ্য খালাসের কাজ বন্ধ রয়েছে।

লাইটার জাহাজ মালিকদের সংগঠন ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা গেছে, কর্মবিরতির কারণে লাইটার জাহাজ গতকাল থেকে বহির্নোঙরে যেতে পারেনি।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ধর্মঘটে বন্দরের খোলা পণ্যবাহী জাহাজের কার্যক্রমে প্রভাব পড়ছে। তবে কন্টেনার জাহাজ বা কন্টেনার হ্যান্ডলিং এবং ডেলিভারিতে কোনো সমস্যা নেই। আউটার অ্যাংকরেজ (বহির্নোঙর) থেকে পণ্য লোড-আনলোড বন্ধ রয়েছে, যা বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রমে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।

শ্রমিকদের ১০ দাবি হলো, নৌযান শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র, সার্ভিস বুক দেয়াসহ সর্বনিম্ন মজুরি ২০ হাজার টাকা নির্ধারণ, খাদ্যভাতা ও সমুদ্রভাতার সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কন্ট্রিবিউটরি প্রভিডেন্ট ফান্ড ও নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন করা, দুর্ঘটনা ও কর্মস্থলে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা।

এছাড়া রয়েছে চট্টগ্রাম থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে জ্বালানি তেল সরবরাহে দেশের স্বার্থবিরোধী প্রকল্প বাস্তবায়নে চলমান কার্যক্রম বন্ধ করা, বালুবাহী বাল্কহেড ও ড্রেজারের রাত্রিকালীন চলাচলের ওপর ঢালাও নিষেধাজ্ঞা শিথিল, নৌ-পথে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও ডাকাতি বন্ধ করা। ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস দেয়াসহ ভারতীয় সীমানায় হয়রানি বন্ধ করা, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন নীতিমালা শতভাগ কার্যকর করে সব লাইটার জাহাজকে সিরিয়াল মোতাবেক চলাচলে বাধ্য করা, চরপাড়াঘাটে ইজারা বাতিল ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরের অনিয়ম-অব্যবস্থাপনা বন্ধ করা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সারা দেশে ধর্মঘট চলবে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ।

সিটিনিউজ সেভেন ডটকম//আর//

 

rr
rr

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *