স্টাফ রিপোর্টার:
একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রীসহ চারজন হত্যাকান্ড ও দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক হত্যা মামলার মৃত্যুদন্ডাদেশপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ও ভাড়াটে সন্ত্রাসী পলাশ গাজী ওরফে জালাল গাজী ওরফে দাঁত ভাঙ্গা পলাশকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) রাতে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে র্যাব-৩ এর একটি আভিধানিক দল।
মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারো এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, ২০১৩ সালে ভাড়াটে সন্ত্রাসী পলাশ গাজী ওরফে জালাল গাজী ওরফে দাঁত ভাঙ্গা পলাশসহ ছয় সন্ত্রাসী সুলতার, তার স্ত্রী ও তাদের দুই নাতীকে কুপিয়ে হত্যা করে। মূলত জমিজমার বিরোধে এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়।
কমান্ডার মঈন বলেন, কুড়িগ্রামের ভুরুঙ্গারি এলাকায় জমিজমার বিরোধ নিয়ে ছোট ভাই সুলতানকে হত্যা করতে দাঁত ভাঙ্গা পলাশের সঙ্গে পাঁচ কোটি টাকা ও এক বিগা জমির বিনিময়ে চুক্তি করে মমতাজ। এরপর পলাশের নেতৃত্বে নজরুল ওরফে মনজু, আমির, জাকির, জালাল ওরফেপলাশ, হাসমত ও মমতাজ মিলে ২০১৪ সালে ১৩ জানুয়ারি গভীর রাতে ভুরুঙ্গামারির দিয়াডাঙ্গায় মমতাজের বাড়িতে বসে সুলতানকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ১৪ জানুয়ারি রাতে পলাশসহ ছয় ভাগাটিয়া সন্ত্রাসী মুখোশ পরে দেশিয় অস্ত্র দিয়ে সুলতানকে কুপিয়ে হত্যা করে। সুলতানকে এলোপাতাড়ী কোপানোর শব্দে তার স্ত্রী হাজেরা বেগম চলে এলে তাকেও কুপিয়ে হত্যা করা
হয়। এসময় পাশের ঘরে থাকা তাদের দুই নাতনি রুমানা ও আনিকাকেও হত্যা করে সন্ত্রাসীরা।
পরবর্তীতে একই পরিবারের ৪ জনকে কুপিয়ে হত্যা করে ঘটনায় নিহত সুলতানের ছেলে হাফিজুর রহমান বাদী হয়ে ভুরুঙ্গামারি থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এঘটনায় কিছুদিন পর ভুরুঙ্হামারিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অন্য একটি হত্যা মামলায় তদন্ত করতে গিয়ে স্বপরিবারে সুলতান হত্যাকান্ডের রহস্য উন্মোচন হয়। এরপর এঘটনায় একে একে অন্য আসামীদের গ্রেফতার করা হলেও আত্মগোপনে চলে যায় দাঁত ভাঙ্গা পলাশ।
এরপর এঘটনায় তদন্ত শেষে মমতাজ উদ্দিন, পলাশ গাজী ওরফে জালাল গাজীসহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরবর্তীতে বিচারিক আদালত ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পলাতক আসামী দাঁত ভাঙ্গা পলাশসহ ৬ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন এবং অপর একজনকে খালাস দেওয়া হয়৷
এছাড়াও, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে বগুড়ার শেরপুরের মির্জাপুর এলাকায় মাইক্রোবাস চুরির উদ্দেশ্যে মাইক্রোবাসের চালক নুরুল হককে হত্যা করে পলাশ গাজী ও তার সহযোগীরা। ওই হত্যাকান্ডের ঘটনায় এ বছরের নভেম্বর মাসে আদালত পলাশ গাজীসহ ৯ জন আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ডদেশ দেওয়া হয়।
খন্দকার আল মঈন বলেন,গ্রেফতার পলাশের কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। তিনি ১৯৯০ সাল থেকে নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরে একটি গ্যারেজে কাজ করত। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে লাইসেন্স ছাড়া কাভার্ডভ্যান চালানো শুরু করে। গ্রেফতার পলাশ মূলত ২০০৯ সাল থেকে অপরাধ কর্মকান্ড শুরু করে। সেসময় তিনি একটি ডাকাত দল গঠনকরে। একটি পুরাতন মাইক্রোবাস নিয়ে ভুয়া ডিবি পুলিশ পরিচয়ে ডাকাতি ও বিভিন্ন ধরনের অপরাধ ও ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবে কাজ শুরু করে। এরপর থেকে তার নেতৃত্বে একটি ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীর দল হগে উঠে। তারা রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলার মহাসড়কে ডাকাতি, খুন, মারামারিসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কার্যক্রম চালাত।
গ্রেফতারকৃত পলাশ গাজীর স্বপরিবারে সুলতান হত্যাকান্ড ছাড়াও বিরুদ্ধে পটুয়াখালীর বাউফল থানায় ২০১৫ সালে হত্যা চেষ্টা মামলা, গাজীপুরের কালীগঞ্জ সড়কে ২০১৫ সালে ডাকাতির প্রস্তুতির মামলা, রাজধানীর মতিঝিল এলাকার সড়কে ২০১৬ সালের ভুয়া ডিবি পরিচয়ে ১টি ডাকাতি ও ১টি অস্ত্র মামলা, ২০১৭ সালে চুরি ও ভাঙ্গচুরের ২টি মামলা এবং রাজধানীর চকবাজার থানায় ২০১৯ সালে বেপরোয়া গাড়ী চালিয়ে একটি হত্যা মামলাসহ তার বিরুদ্ধে মোট ১১টি মামলা রয়েছে।
গ্রেফতারকৃত আসামির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
সিটিনিউজ সেভেন ডটকম//আর//