নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
২ মাস আগে জাহিদুর রহমান খন্দকার নিজের বাবা মজিবুর রহমান খন্দকারের সঙ্গে প্রতারণা শুরু করেন। তাকে বিশ্বাস করান, প্রধানমন্ত্রীর এপিএস-২ হাফিজুর রহমান লিকুর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং মজিবুর রহমানকে তার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন। এরপর একটি ভুয়া ফোন নম্বর থেকে তিনি নিজেই তার বাবার সঙ্গে এপিএস লিকুর পরিচয় দিয়ে কথা বলেন এবং তার বাবাকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। এতে মজিবুর রহমান প্ররোচিত হয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে এপিএস-২ এর তদবিরের মাধ্যমে অর্থের বিনিময়ে চাকরিতে নিয়োগ ও বদলির আশ্বাস ও পদোন্নতির লোভ দেখিয়ে প্রতারণা শুরু করেন। অনেকের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা দাবি ও আত্মসাৎ শুরু করেন।
অবশেষে শনিবার (৮ জুলাই) রাতে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানা এলাকা থেকে বাবা ছেলেকে গ্রেফতার করে ডিএমপির ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ)-এর ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।
গ্রেফতারকৃত দুজন হলেন- জাহিদুর রহমান খন্দকার (৪১) ও মজিবুর রহমান খন্দকার (৭৩)।
এসময় তাদের কাছ থেকে পুরাতন ব্যবহৃত চারটি মোবাইল ফোন, সিম কার্ড, প্রতারণায় ব্যবহৃত বিভিন্ন ভুয়া পরিচয়পত্র, মাদক গ্রহণের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম ও ভুয়া নিয়োগপত্র উদ্ধার করা হয়।
রোববার (৯ জুলাই) বিকেলে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, শুধু প্রধানমন্ত্রীর এপিএস হাফিজুর রহমান লিকুর ছদ্মবেশ ধারণই নয়, জাহিদুর নিজেকে বিভিন্ন সময় ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতা পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে থাকেন। কখনো জাতীয় শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, হযরত শাহাজালাল (রা.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থানার বি.এম. ট্রান্সপোর্ট লি. এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, ঢাকা মহানগর উত্তর বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের সভাপতি পরিচয় দিতেন। এতে প্রতারণা করতে তার অনেক সহজ হতো।
হারুন বলেন, অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব পদে পদোন্নতি, বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক থেকে মহাপরিচালক পদে পদোন্নতি, পল্লি দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের সিনিয়র সহকারী পরিচালক থেকে উপ-পরিচালক পদে পদোন্নতি, পুলিশ ইন্সপেক্টরকে থানার ওসি হিসেবে পদায়ন, বাংলাদেশ পল্লি উন্নয়ন বোর্ডে নিয়োগ দেওয়ার নামে তারা প্রতারণা করতেন। এসবের ফাইলও তৈরি করেছেন জহিদুর। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ার ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ভুয়া এনআইডি করে দিতেন তিনি।
ডিবি পুলিশ জানায়, মানারত ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ইংরেজি মাধ্যমে ও-লেভেল পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন জাহিদুর রহমান খন্দকার। একসময় পড়ালেখা বাদ দিয়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। তারপর থেকে বিভিন্ন রকম প্রতারণায় জড়িয়ে পড়েন। আর তার বাবা মজিবুর রহমান নিজেকে বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনীর রিটায়ার্ড মেজর বলে পরিচয় দিতেন। তাছাড়া কখনো ব্যবসায়ী, হোমিওপ্যাথি ডাক্তার, পিএইচডি ডিগ্রীধারী বলেও পরিচয় দিতেন। বিভিন্ন ছদ্মনামে প্রতারণা করেন।
অবৈধভাবে চাকরি পাওয়ার জন্য টাকা পয়সা না দেওয়া, অপরিচিত কেউ সরকারি কর্মকর্তা বা রাজনৈতিক ব্যক্তিদের আত্মীয় পরিচয় দিলে তাদের পাতানো ফাঁদে পা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ডিবি।
//এস//