প্রেমের টানে চুয়াডাঙ্গায় চীনা যুবক
জুলাই ১৩, ২০২৩
গ্রামে সকল নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে : প্রধানমন্ত্রী
জুলাই ১৩, ২০২৩

দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্ষমতা সম্পন্ন পরিবেশবান্ধব দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ এশিয়ায় এটি সর্ববৃহৎ সমন্বিত পয়ঃশোধনাগার।
বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এর আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। একই অনুষ্ঠানে থেকে তিনি পাগলা পয়ঃশোধনাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।

রাজধানীর আফতাবনগরে বালু নদীর তীরে প্রায় ৬২ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত অত্যাধুনিক এই শোধনাগারটি দেশের পয়ঃশোধন খাতে একটি মাইল ফলক প্রকল্প। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ৪৮২ কোটি টাকা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, রাজধানীতে দৈনিক প্রায় ২০০ কোটি (২০০০ মিলিয়ন) লিটার পয়ঃ বর্জ্য উৎপন্ন হয়। যার মধ্যে প্রায় ২০-২৫ শতাংশ পয়ঃ শোধন করতে সক্ষম এই দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার।
দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারের মাধ্যমে বর্তমানে মগবাজার, ওয়ারলেস রোড, ইস্কাটন, নয়াটোলা, মৌচাক, আউটার সার্কুলার রোড, নয়াটোলা, মহানগর হাউজিং, উলন ও তৎসংলগ্ন এলাকা, কলাবাগান ও ধানমন্ডির (পূর্বাংশ), তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল, তেজগাঁও এলাকা, নাখালপাড়া, নিকেতন, বাড্ডা, বনানী ও গুলশান (আংশিক) এলাকার পয়ঃ বর্জ্য পরিশোধন করা হচ্ছে। ঢাকার অন্য পয়ঃশোধনাগারগুলো নির্মাণ হলে এসব এলাকা থেকে বেশ কিছু এলাকা সংযোজন ও বিয়োজন করা হবে।
বর্তমানে দাশেরকান্দি শোধনাগারে যেসব এলাকার পয়ঃশোধন করা হচ্ছে আগে সেসব এলাকার পয়ঃবর্জ্য সরাসরি রামপুরা খালের মাধ্যমে বালু নদীতে পড়তো এবং বালু নদীর মাধ্যমে অন্যান্য নদী ও আশপাশের জলাশয়ের পানি দূষিত করতো।
সদ্য নির্মিত দৈনিক ৫০ কোটি লিটার শোধন ক্ষমতা সম্পন্ন এই পয়ঃশোধনাগারটির কার্যক্রম শুরুর ফলে পরিবেশ দূষণ প্রতিরোধের পাশাপাশি রামপুরা খাল, বালু ও শীতলক্ষা নদীসহ অন্যান্য জলাশয়ের পানির মান উন্নয়ন হতে শুরু করেছে।

গত মঙ্গলবার (১১ জুলাই) প্রকল্পটি পরিদর্শনকালে ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান সাংবাদিকদের জানান, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদীর পানির দূষণ কমায় সায়েদাবাদ পানি শোধনাগার ফেজ-১ ও ফেজ-২ এর ইনটেক পয়েন্ট শীতলক্ষ্যা নদীর সারুলিয়ায় পানির মান আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। ফলে সায়েদাবাদে পানি শোধন ব্যয় কিছুটা সাশ্রয় হচ্ছে।
পানির মানের উন্নতির ফলে বালু নদী ও শীতলক্ষ্যায় মাছের উৎপাদন বাড়ছে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।
মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ঢাকা মহানগরীকে পাঁচটি এলাকায় ভাগ করে পাগলা, দাশেরকান্দি, উত্তরা, রায়েরবাজার ও মিরপুরে মোট ৫টি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (পয়ঃশোধনাগার) নির্মাণ করবে সরকার।
ঢাকা ওয়াসার ম্যানেজিং ডিরেক্টর তাকসিম এ খান বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী সব কয়কটি পয়ঃশোধনাগার বাস্তবায়ন হলে নগরবাসীর শতভাগ উন্নত ও টেকসই পয়ঃসেবা নিশ্চিত হবে।
তিনি বলেন, দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার মাস্টার প্ল্যানের পাঁচটির একটি। ৫০০ মিলিয়ন লিটার প্রতিদিন এখানে ট্রিটমেন্ট করা যায়। চাইনিজদের ভাষায়, এই জাতীয় ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট চায়নাতেও নেই। সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট, প্ল্যান্ট ট্রিটমেন্ট, ইনসেনেরেশন। সব ট্রিটম্যান্ট একই প্লান্টে। চায়নাতে এর চেয়ে বড় থাকতে পারে, কিন্তু একসঙ্গে তিনটি সার্ভিস নেই।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট, প্ল্যান্ট ট্রিটমেন্ট এবং ইনসেনেরেশন একই ট্রিট প্ল্যান্টে সবগুলো করা হচ্ছে। এই বিবেচনায় এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় সমন্বিত ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট।
দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মহসিন আলী বলেন, এটি হাতিরঝিল সমন্বিত প্রকল্পের একটি অংশ। দাশেরকান্দি প্রকল্পের তিনটি অংশ রয়েছে। একটি রামপুরা ব্রিজের পাশে হাতিরঝিল সংলগ্ন লিফটিং সেশন। এখানে আটটি পাম্প বসানো আছে, যার মধ্যে ছয়টি সব সময় চালু থাকে। লিফটিং সেশন থেকে দাশেরকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৫ কিলোমিটার ডাবল লাইন (মোট ১০ কিলোমিটার) ট্র্যাংক স্যুয়ার লাইন রয়েছে। এর মাধ্যমে পয়ঃবর্জ্য ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে পাঠানো হয়।
তিনি বলেন, পয়ঃশোধনের পর সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত পরিশোধিত পরিস্কার পানি বালু নদীতে ফেলা হয়। আর সলিড বর্জ্য পুড়িয়ে ফ্লাই অ্যাশ তৈরি করা হয়।
দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আরও জানান, পয়ঃ বর্জ্য (সুয়ারেজ স্লাজ) থেকে এই প্ল্যান্টে দৈনিক প্রায় ৪৫ মেট্রিক টন ফ্লাই অ্যাশ তৈরি হবে যা সিমেন্ট কারখানায় ফ্লাই অ্যাশ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

//এস/

rr
rr

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *