নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা
রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে শিশু সালমান অপহরণের ঘটনায় দুইজনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। অপহরণকারীরা সালমানকে ট্রেনে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নিয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন ট্রেনে ঘুরে ঘুরে অপহৃত পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। অপহৃতের বাবা মওলানা ইমদাদুল্লা হজে থাকায় অভিযুক্তরা এ সুযোগ কাজে লাগায়।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- মো. শাফায়েত হোসেন আবির ও মো. আল আমিন। এই ঘটনায় আরও দুইজনের নাম পেয়েছে র্যাব। তারা হলেন- হেলাল ও আইয়ুব।
র্যাব জানায়, ১৫ জুলাই মমিনবাগ এলাকা থেকে ট্রেন দেখানোর কথা বলে সালমানকে নিয়ে চট্টগ্রাম চলে যায় তিন অপহরণকারী। পরের দিন (১৬ জুলাই) অজ্ঞাত এক ব্যক্তি অপহৃতের পরিবারকে ফোন করে এবং মুক্তিপণ দাবি করে। পরে সালমানের পরিবার স্থানীয় থানা পুলিশ ও র্যাব-১০ কে অবহিত করে। পরবর্তীতে র্যাব চট্টগ্রামে অভিযান চালিয়ে দুইজনকে গ্রেফতার করে। এসময় অপর দুইজন পালিয়ে যায়।
মঙ্গলবার ( ১৮ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, চার বছরের শিশু অপহরণ ও মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবির ঘটনায় অপহৃত শিশুকে চট্টগ্রাম মহানগরীর সদরঘাট এলাকা থেকে উদ্ধার করেছে র্যাব-১০।
অপহরণ চক্রের মূলহোতা শাফায়েত হোসেন আবির ও আল আমিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
মঈন আরও বলেন, গত রাতে র্যাব-৭ ও ১০ এর একটি আভিযানিক দল তথ্য প্রযুক্তির সহায়তা, ঘটনাস্থলের আশপাশের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে চট্টগ্রামের সদরঘাট আইস ফ্যাক্টরি রোড এলাকায় যৌথ অভিযান চালায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে শাফায়েত ও আল আমিন ভিকটিম সালমানের পাশের বাসায় ভাড়াটিয়া। তিনমাস আগে ভিকটিমকে তাদের বাসার সামনে খেলাধুলার সময় তাকে অপহরণের পরিকল্পনা করে এবং ভিকটিমের বাবা হজ পালনের জন্য সৌদি আরবে অবস্থান করছিল। এই সময়টাকে বেছে নেয় তারা। পরিকল্পনা অনুযায়ী আল আমিন ভিকটিমকে বিভিন্ন সময়ে চিপস্, চকলেট, খেলনা কিনে দিয়ে তার সঙ্গে সখ্যতা ও বিশ্বস্ততা অর্জন করে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৫ জুলাই ভিকটিমের বাসার সামনে খেলাধুলা অবস্থায় আল আমিন ভিকটিমকে অপহরণ করে কামরাঙ্গীরচরের মাদবর বাজার এলাকায় আল আমিনের পরিচিত তার অপর এক সহযোগি হেলালের কাছে নিয়ে যায়। পরিবর্তীতে হেলাল ভিকটিমকে চট্টগ্রামে নিয়ে যায় এবং শাফায়েত ও আল আমিনকে চট্টগ্রামে যেতে বলে। চট্টগ্রামে গিয়ে হেলালের পরিচিত আইয়ুবের বাসায় সালমানকে রাখা হয়। পরবর্তীতে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভিকটিমের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে ভিকটিমকে অপহরণের বিষয়টি জানায়। এসময় ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। ভিকটিমের পরিবার মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে অপহরণকারীদের পাঁচ হাজার টাকা প্রদান করে।
আলাপচারিতার একপর্যায়ে অপহরণকারীরা পাঁচ লাখ টাকার বিনিময়ে সালমানকে ফেরত দিতে রাজি হয়। একপর্যায় মুক্তিপণের টাকা নিয়ে চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকায় আসতে বলে। অপহরণকারীদের কথা মতো ভিকটিমের পরিবার তাদেরকে আশ্বস্ত করে, তারা মুক্তিপণের টাকা নিয়ে চট্টগ্রামে যাচ্ছে এবং ভিকটিমের যাতে কোনো ক্ষতি না হয়।
র্যাব মুখপাত্র আরও বলেন, ভিকটিমের পরিবার মুক্তিপণের টাকা নিয়ে আসতে দেরি হওয়ায় তারা সময় অতিবাহিত এবং তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে আল আমিন এবং শাফায়েত সালমানকে সঙ্গে নিয়ে ট্রেনযোগে ফেনী-চট্টগ্রাম যাতায়াত করে। অপহরণকারী শাফায়েত ও আল আমিন ভিকটিমকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে আইয়ুবের নিকট রেখে মুক্তিপনের টাকা নেওয়ার জন্য চট্টগ্রামের নিউ মার্কেট এলাকায় যায়। পরে র্যাব তাদেরকে গ্রেফতার করে। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী ভিকটিমকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পৌঁছালে আইয়ুব র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ভিকটিমকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ফুটওভার ব্রিজ এলাকায় একা রেখে কৌশলে পালিয়ে যায়।
ট্রেনে ঘুরে ঘুরে কেন অপহরণ ফাঁদ পাতা হয়েছিল এমন প্রশ্নে কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তারা জানতে পেরেছে এক জায়গায় বসে মুক্তিপণ চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরকে সহজে শনাক্ত করে ফেলে। এজন্য তারা একেক সময় একেক ট্রেনে ঘুরে ঘুরে অপহরণের টাকা দাবি করছিল। তারা অভিনব পন্থা অবলম্বন করছিল, তবে র্যাব তাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে।
//এস//