ইবিতে ছাত্রী নির্যাতন: জড়িত ৫ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার
আগস্ট ২১, ২০২৩
নিপুণ রায়কে ৮ সপ্তাহের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ
আগস্ট ২১, ২০২৩

পল্লবীতে ভবন থেকে পড়ে তরুণীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক
রাজধানীর মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার একটি ভবন থেকে পড়ে আফরোজা আক্তার মিমি (২১) নামের এক তরুণীর মৃত্যু হয়েছে। পুলিশি হয়রানীর শিকার হয়ে ওই তরুণী আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ তার বাবার।

মৃত আফরোজা আক্তার মিমি মিরপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ডিপ্লোমা প্রকৌশলে পড়াশোনা করছিলেন।

সোমবার সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে আফরোজার বাবা মো. আফসারউদ্দীন অভিযোগ করে বলেন, তার মেয়ে একটি অপরাধের শিকার হয়েছিলেন। থানায় মামলা করার পর তদন্ত কর্মকর্তার ‘উৎপাতে’ তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশ বলছে, মেয়েটি ‘দুর্ঘটনাবশত’ ছাদ থেকে পড়ে মারা গেছে।

আফসারউদ্দীন বলেন, তার মেয়ে এক ব্যক্তির প্রতারণার শিকার হয়ে গর্ভপাতে বাধ্য হন। এরপর পল্লবী থানায় ধর্ষণ ও ভ্রুণ হত্যার অভিযোগে মামলা করে পরিবার। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বিভিন্ন সময় ফোন করে টাকা চাইতেন। আমার মেয়েকে ফোন করে তার সঙ্গে অন্য পুরুষদের জড়িয়ে চার্জশিট দেয়ার ভয় দেখাতেন। এসব কারণেই মেয়েটা রোববার (২০ আগস্ট) ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করছে।

পল্লবী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মেজবাহউদ্দীন বলেন, মেয়েটি ছাদ থেকে দুর্ঘটনাবশত পড়ে মারা যেতে পারে। তখন সেখানে ১৩-১৪ বছরের একটি মেয়ে ছিল, যে অন্য বাসার গৃহকর্মী। এছাড়া সিসি ক্যামেরাতেও বিষয়টি ধরা পড়েছে।

আফসারউদ্দীন বলেন, আমরা আত্মহত্যায় প্ররোচনার মামলা করতে চাই। কিন্তু পুলিশ চাপ দিচ্ছে অপমৃত্যু মামলা করার জন্য। রোববার (২০ আগস্ট) দুপুরে মারা গেলেও এখনো মর্গে সুরতহালের কাগজ পাঠায়নি পুলিশ। সে কারণে লাশের ময়নাতদন্ত হচ্ছে না। আমরা দাফনও করার জন্য নিয়ে যেতেও পারছি না।

তিনি জানান, গত বছর মেহেদি হাসান জনি নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার মেয়ের পরিচয় হয়। জনি নায়িকা বানানোর লোভ দেখিয়ে ওর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এক পর্যায়ে ডিওএইচএস এলাকাতেই ফ্ল্যাট ভাড়া করে থাকতে শুরু করে। মিমি ও জনির বিয়ে হয়নি। এফিডেফিট করেছিলেন তারা। চলতি বছর তার মেয়ে অন্তঃসত্ত্বা হলে জনি তাকে গর্ভপাত ঘটাতে বাধ্য করেন। এরপর মিমি অসুস্থ হয়ে পড়লে গত মে মাসে তাকে বাসায় নিয়ে যান আফসারউদ্দীন। পল্লবী থানায় ধর্ষণ ও ভ্রুণ হত্যার অভিযোগে মামলা করেন তিনি।

আফসারউদ্দীন বলেন, মামলা করার পর পুলিশ জনিকে গ্রেপ্তার করে। ১৭-১৮ দিন পর জামিনে বের হয়ে জনি আবারও উৎপাত শুরু করে। এরমধ্যে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার এসআই মোবারক আলী টাকা চাওয়া শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত ৫০ হাজার টাকা দিতে রাজি হই আমরা। তিন কিস্তিতে ৩২ হাজার টাকা পরিশোধও করি। তবুও এসআই মোবারক বিভিন্ন সময় আমার মেয়েকে ফোন করে টাকা না দিলে খারাপ রিপোর্ট দেয়ার হুমকি দিত। পুলিশের এমন উৎপাতেই আমার মেয়েটা আত্মহত্যা করছে, ছাদে উঠে লাফ দিছে। এখন আমি আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলা করতে চাই। কিন্তু দেখেন কালকে দুপুরে ও মারা গেছে, আজকে পর্যন্ত পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্টটা দিচ্ছে না।

আফসারউদ্দীন বলেন, মানসিকভাবে অনেক অসুস্থ হয়ে পড়ায় মেয়েকে মেন্টাল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মামলার সাক্ষী দেয়াসহ এটা-সেটা বলে পুলিশ আবার ডেকে আনালো। এরপর আমরা আর ওকে ট্রিটমেন্টে দিতে পারিনি। মেয়েটা আমার শেষ পর্যন্ত মরেই গেল।

আফসারউদ্দীনের অভিযোগের বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার এসআই মোবারক আলী বলেন, আমার টার্গেট হচ্ছে মামলা ডিটেক্ট করা। উনি এখন বিপদে আছেন তো, অনেক কিছুই বলছেন। আমি এ বিষয়ে আর কিছু বলতে চাই না।

পল্লবী জোনের সহকারী কমিশনার শাহীদুল ইসলাম বলেন, মেয়েটি একটি ঘটনার শিকার। সেই মামলার তদন্ত চলছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন না আসায় তদন্ত কাজ শেষ করা যাচ্ছে না।

তদন্তকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বাদীর পরিবারকে টাকার জন্য চাপ এবং মিথ্যা অভিযোগপত্র দেয়ার হুমকির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাহীদুল ইসলাম বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তার বিষয়ে কোনো অভিযোগ এলে আমরা কর্মকর্তা বদলে দিই। বাদীর পরিবারের কেউ অভিযোগ করলে অন্য কাউকে তদন্ত করতে বলতাম। বাদী পক্ষের কেউ লিখিত বা মৌখিকভাবে জানালেও চলতো। তবে অভিযোগ যখন উঠেছে, তখন নিশ্চই তা খতিয়ে দেখা হবে। যথাযথ তথ্য-প্রমাণ পেলে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

//এস//

rr
rr

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *