জাকির হোসেন:
বাজার কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে। বেশ কিছু পণ্য রয়েছে, যেগুলোর দাম প্রতি মাসেই দফায় দফায় বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে ডিম, আলু, পেঁয়াজ, চিনি ও ভোজ্য তেলের দর নির্ধারণ করে দেয়।
কিন্তু বেঁধে দেওয়া দামে বাজারে ওই পাঁচ পণ্য বিক্রি হচ্ছে না। ওদিকে ডিম, আলুসহ নিত্যপণ্যের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বেগ জানিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের প্রতি আহবান জানিয়েছেন ২৪ বিশিষ্ট নাগরিক। ঢাকাসহ সারা দেশেই নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গত শনি, রবি ও সোমবার—এই তিন দিনের অভিযানে ৩৫৭ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে সংস্থাটি।আদায় করা হয়েছে ১৫ লাখ ৭৩ হাজার টাকা জরিমানা।
ওদিকে ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণে এবার চার কোটি ডিম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। চারটি প্রতিষ্ঠানকে যত দ্রুত সম্ভব দেশে এই ডিম আনতে বলা হয়েছে। ডিম আমদানিতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পাঁচটি শর্ত পালনের বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।
এর আগে পেঁয়াজের দাম নিয়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল। আমদানির পরও খুচরা বাজারে কোনো প্রভাব কি পড়েছে?
বাংলাদেশের বাস্তবতা হচ্ছে, এখানে বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেও সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন। কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। বাজারে পণ্যের দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে একটি অদৃশ্য সিন্ডিকেটের কথা শোনা যায়।
এই সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করে, এমন কথাও চালু আছে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে কারসাজি করা সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখতে আইনের কঠোর প্রয়োগ হবে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিলেই মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা রোধ করা যাবে না। যে কারণে বাজারে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে সেসব রোধেও উদ্যোগ নিতে হবে। বাজারে পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের এই উদ্যোগ ইতিবাচক।
অসাধু ব্যবসায়ীরা যাতে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পারেন এবং পণ্যের সরবরাহব্যবস্থা যেন কোনোভাবে বাধাগ্রস্ত না হয়, সরকারকে সেদিকে কঠোর নজরদারি করতে হবে। বাজারে সরবরাহব্যবস্থা নিশ্চিত করতে সরকারকে প্রয়োজনে নিত্যপণ্য আমদানি করতে হবে।
বাজার এমন এক জায়গা, যেখানে একচেটিয়া ব্যবসা করার সুযোগ যেমন আছে, তেমনি প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রও তৈরি করা সম্ভব। চলমান বাজার ব্যবস্থাপনার সমান্তরালে পৃথক একটি বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা গেলে সাধারণ মানুষের জন্য সেটা অনেকটাই স্বস্তির কারণ হবে। সেই সঙ্গে নিয়মিত বাজার মনিটর করা গেলে অসাধু ব্যবসায়ীরাও পণ্যের দাম নিয়ে কোনো কারসাজি করতে পারবেন না। সে ক্ষেত্রে বিকল্প বাজারব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে। সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। সাধারণ মানুষ বা ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার দায়িত্ব সরকারের। আমদানি ঠিক রেখে সাপ্লাই চেইন সচল রাখার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ ও বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
জাকির হোসেন, সম্পাদক, সিটিনিউজ সেভেন ডটকম