জাতীয় নির্বাচন: বাংলাদেশ ভ্রমণে যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি সতর্কতা জারি
অক্টোবর ১৩, ২০২৩
নিউজিল্যান্ডের কাছে বাংলাদেশের বড় হার
অক্টোবর ১৩, ২০২৩

মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে একান্ত বৈঠক নিয়ে যা বললেন ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানের আমেরিকান ক্লাবে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সঙ্গে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তবে বৈঠকের বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি তিনি।

শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে ফখরুলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন সাংবাদিকেরা।

এ বিষয়ে ফখরুল বলেন, আমরা এটার উত্তর দেব না। কালকে দিয়ে দিয়েছি (উত্তর)। আমি আপনাদের একটাই অনুরোধ করব সব সময়, আমরা সবাই তো এ দেশের মানুষ। আমাদের প্রত্যেকেরই এই দেশের প্রতি, মাটির প্রতি, মানুষের প্রতি দায়িত্ব আছে। আপনারা সাংবাদিক, স্বাভাবিকভাবেই স্কুপ নিউজ খুঁজবেন। বাট এট দ্য সেম টাইম সেই বিষয়টাকে আমরা ডাইভার্ট করব না, যা জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

গতকাল বৃহস্পতিবার পিটার হাসের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘণ্টাব্যাপী চলে বৈঠক। বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু না জানানো হলেও দলটির একটি সূত্র বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সূত্রটি বলছে, পিটার হাসের সঙ্গে আজকের বৈঠকটি পূর্বনির্ধারিত ছিল না। এই বৈঠকের কারণেই এদিন পূর্বনির্ধারিত দুপুর ১২টার সংবাদ সম্মেলনও স্থগিত করা হয়। বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের রাজনীতি ও অর্থনীতি-বিষয়ক ডেপুটি কাউন্সিলরও উপস্থিত ছিলেন।

গতকাল সন্ধ্যায় বৈঠকের বিষয়টি অস্বীকার করে বিষয়টি ‘গুজব’ দাবি করে গণমাধ্যমকে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এ ধরনের কোনো বৈঠক হয়নি। সম্পূর্ণ মিথ্যা। গুজব ছড়ানো হচ্ছে।’

এর আগে শুক্রবার বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে লিখিত বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সেক্টরে শনির আছর পড়েছে বর্তমান আওয়ামী ফ্যাসিস্ট লুটেরা সরকার ২০০৯ সালে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করার শুরুর দিকেই। যার পরিণতিতে আজ সমগ্র অর্থনীতি ভয়াবহ নৈরাজ্যকর অবস্থায় পতিত হয়েছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতির প্রতিটি প্রধান সূচকের (মূল্যস্ফীতি, নিম্নমুখী বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, নিম্নমুখী রেমিট্যান্স প্রবাহ, চলতি হিসাবের ঘাটতি, রাজস্ব ঘাটতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে টাকার দরপতন) অবস্থান এতটাই শোচনীয়, যা দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিকে এক মহাবিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিয়েছে। অথচ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকট আগের তুলনায় অনেকটা কমেছে। বিশ্ব অর্থনীতি গতি হারালেও থমকে যায়নি। অনেক দেশ মূল্যস্ফীতি কমাতে সফল হচ্ছে। কি ভয়ংকর ও বিপর্যয়কর অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে শ্রীলঙ্কা কত দ্রুত ওভারকাম করতে শুরু করেছে। তারা বাংলাদেশের কাছ থেকে ধার নেওয়া কিছু ঋণ ইতিমধ্যে শোধও করেছে।

ফখরুল বলেন, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতি রেকর্ড ছিল ৬৯.৮ শতাংশ, যা ২০২৩–এর আগস্টে নেমে হয়েছে মাত্র ২.১ শতাংশ। অর্থাৎ ১ বছরের মাথায় ৬৭ শতাংশ পয়েন্ট কমিয়ে এনেছে শ্রীলঙ্কা। অথচ আমাদের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ছে তো পড়ছেই। যেভাবে জোড়াতালি দিয়ে অস্বচ্ছ ও সমন্বয়হীনভাবে সমস্যাগুলোর সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, তাতে অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ব্যাংকিং চ্যানেলে ডলারের দাম আরও বেড়েছে। এখন খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেট) এক ডলার কিনতে গ্রাহকদের গুনতে হচ্ছে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ভবিষ্যতের জন্য ডলার বুকিং দিয়ে রাখলে এক বছর পর প্রতি ডলারে ১২৩ টাকা ৩৫ পয়সা পরিশোধ করতে হবে। বৈদেশিক মুদ্রার মজুতের পতনও ঠেকানো যাচ্ছে না। রিজার্ভ পতনে বিপর্যয়ের মাস সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে রিজার্ভ এখন ২১ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। আর আইএমএফ–এর হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে নিট রিজার্ভ ১৭ বিলিয়ন ডলার।

তিনি আরো বলেন, রেমিট্যান্সের বিপর্যয় আরও গভীর হয়েছে। টানা ৩ মাস ধরে এ আয় কমেছে। ৪১ মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বরে সর্বনিম্ন ১৩৪ কোটি ডলার। গত ৩ বছরের মধ্যে সেপ্টেম্বরে একক মাসে সর্বনিম্ন রেমিট্যান্স এসেছে। প্রতি মাসে যেভাবে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত কমছে, তাতে বড় ধরনের সংকটের দিকে এগোচ্ছে দেশের অর্থনীতি। ডলারের অভাবে এলসি খুলতে পারছেন না ব্যবসায়ী ও শিল্প মালিকেরা। আর অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে অত চিন্তার কিছু নেই’।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, একদিকে দেশের সাধারণ মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় খরচ মেটাতে পারে না, হত দরিদ্র মানুষ পেট ভরে দুবেলা খেতে পারে না, অন্যদিকে আওয়ামী স্বৈরশাসকেরা উন্নয়নের গালগল্প করে দেশটিকে ঋণের জালে জর্জরিত করে দেউলিয়ার পথে ঠেলে দিয়েছে। উন্নয়নের নামে আওয়ামী লীগ সরকারের সর্বগ্রাসী দুর্নীতি, আর ঋণ করে ঘি খাওয়ার পরিণতিতে দেশ এখন প্রায় ২০ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের চাকায় পিষ্ট। কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণে বিলম্ব, ভ্রান্তনীতি গ্রহণ, নীতির সমন্বয়হীনতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, সর্বোপরি লাগামহীন দুর্নীতির কারণে বাংলাদেশ সংকট থেকে বের হতে পারছে না।

//এস//

rr
rr

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *