ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জানুন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন

জাকির হোসেন:
বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে মহামারি আকারে ধেয়ে আসা অসংক্রামক রোগ ডায়াবেটিসকে প্রতিরোধের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ব ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা ২০২০-২৫-এ ডায়াবেটিস রোগের বিস্তার রোধে উপযুক্ত কৌশল নির্ধারণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতে ১৪ নভেম্বর সাড়ম্বরে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস উদযাপনে এবারের প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে, ‘ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জানুন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন’। অর্থাৎ পরিবেশের প্রভাব থেকে ডায়াবেটিসের বিস্তার প্রতিরোধের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির বিষয়টি মুখ্য বিবেচনায় উঠে এসেছে।

বস্তুত বিগত শতাব্দীর শেষার্ধে সংক্রামক ব্যাধি নিচয়ের নিয়ন্ত্রণে গোটা বিশ্বে সবাই উঠে পড়ে লাগলেও এবং গুটি বসন্ত, কলেরা, যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়ার মতো মহামারি নির্মূলে সফল হতে সক্ষম হলেও মানুষের সুন্দর, সাবলীল জীবনযাপনের পথে নীরবে তার সব কর্মক্ষমতা হরণকারী অসংক্রামক ব্যাধি ডায়াবেটিসের বিস্তার রোধ ও নিয়ন্ত্রণে ব্যক্তিসচেতনতার অনিবার্যতা এবং এর জন্য সুপরিকল্পিত সর্বজনীন উদ্যোগ গ্রহণে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা গ্রহণের আবশ্যকতা যথা মনোযোগ ও চেতনার চৌহদ্দিতে আনা আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান সমস্যা ও সীমাবদ্ধতাগুলোর প্রতি বিশ্ব দৃষ্টি আকর্ষণ এবং সব সরকার ও জনগণের তরফে সংহত ও সমন্বিত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে ঐকমত্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি (বাডাস) জাতিসংঘকে প্রস্তাব গ্রহণের আহ্বান জানায়। মূলত বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির হয়ে বাংলাদেশ সরকারের আহ্বানে এবং যৌক্তিকতার প্রচারণা-প্রয়াসে ১৪ নভেম্বরকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়ে জাতিসংঘ ২০০৭ সালে ৬১/২২৫ নম্বর প্রস্তাব গ্রহণ করে। সেই থেকে জাতিসংঘের সব সদস্য দেশে, বিশ্ব ডায়াবেটিক ফেডারেশনের ২০০-এর অধিক সদস্য সংগঠনে, বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য সংস্থা, কম্পানি, পেশাজীবী সংগঠন ও ডায়াবেটিক রোগীদের মধ্যে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস নানা প্রাসঙ্গিক প্রতিপাদ্য বিষয় নিয়ে উদযাপিত হচ্ছে।

২০০৭ সালেই জাতিসংঘের গৃহীত প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গে (ব্লু) নীল সার্কেল লোগোটিও নির্বাচিত হয়। নীল বৃত্ত জীবন ও স্বাস্থ্যের ধনাত্মক প্রতীক, নীলাকাশ সব জাতিনিচয়কে সংঘবদ্ধ করেছে এবং এ কারণে জাতিসংঘের পতাকার রংও নীল। নীল বৃত্ত বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিস মহামারিকে নিয়ন্ত্রণ ও জয়ে ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের প্রতীক। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার ক্ষেত্রে ১৯২১ সালে ফ্রেডরিক ব্যান্টিং ও চার্লস বেস্ট কর্তৃক ইনসুলিনের আবিষ্কার এক যুগান্তকারী অগ্রগতি।

এ জন্য ব্যান্টিং চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯২৩ সালে। বলা বাহুল্য, ১৪ নভেম্বর ফ্রেডরিক ব্যান্টিংয়ের জন্ম দিবসকেই তাঁর প্রতি সর্বোচ্চ সম্মান দেখাতে বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ নয়। বেশি মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হয়- এ ধারণা ঠিক নয়। জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ ইব্রাহিমের ভাষায়, 3D (Diet, Discipline and Drug) অর্থাৎ খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, শৃঙ্খলা এবং ওষুধ এ রোগ নিয়ন্ত্রণের উপায়।

খাদ্যের গুণগত মানের দিকে নজর রেখে পরিমাণমতো খাদ্য নিয়মিতভাবে গ্রহণ, জীবনের সব ক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন বা শৃঙ্খলা মেনে অর্থাৎ কাজকর্মে, আহারে, বিহারে, চলাফেরায়, এমনকি বিশ্রামে এবং নিদ্রায় শৃঙ্খলা মেনে চলা দরকার।

জাকির হোসেন, সম্পাদক, সিটিনিউজ সেভেন ডটকম