আদম তমিজির বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলা
নভেম্বর ১৮, ২০২৩
এবার নিজেকে ইহুদি দাবি করে ইসরায়েলের নাগরিত্ব চাইলেন তমিজি
নভেম্বর ১৮, ২০২৩

বিশ্বকাপ ক্রিকেট ও কিছু কথা

জাকির হোসেন:

উপমহাদেশের মতো ক্রিকেট উন্মাদনা আর কোথাও দেখি না। কোথাও নাই এতো আনন্দ এতো বিদ্বেষ এতো উত্তেজনা! উপমহাদেশের দেশগুলোর জনপ্রিয় ফুটবল এখন হাহাকার করছে। সকার বিশ্বকাপ ছাড়া আর কোনো খেলা মানুষকে টানে না। বাদবাকি যে কোনো খেলা প্রায় রূপকথার গল্প! খেলাগুলো খাতায় আছে বা মাঠে থাকলেও হৃদয়ে নাই। মানুষের মনে এতো ক্রিকেট প্রেম? যারা ব্যাটিং বোঝে না, ফিল্ডিং বোঝে না, ডিপ লেগ বা মিড উইকেট চেনে না এমনকি কত বলে এক ওভার তাও ঠিকমতো জানে না তারাও ক্রিকেটপ্রেমী। অনেকে মনে করেন এর পেছনে একদিকে যেমন হুজুগ, আরেক দিকে আছে জুয়া। সে কথায় পরে আসছি।

ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা কেমন তা কলকাতা থকায় হাঁড়ে হাঁড়ে টের পেয়েছিলাম। যে সব হোটেলে রুম ভাড়া ছিল দশ-এগারো হাজার টাকা সেগুলো রাতারাতি পঁচিশ থেকে পঞাশ হাজার হয়ে গেলো। তাও ঠাঁই নাই। এই অবস্থা ভারতের সব শহরে। মনে রাখতে হবে উপমহাদেশে ক্রিকেট শুধু খেলা নয়, এ এক ধরনের জেহাদ বা ধর্মযুদ্ধ। পাক-ভারতের খেলা কি আদৌ কোনো খেলা? এই খেলা কি কেবল মাঠে হয়? কোটো কোটি মানুষের ঘরে ঘরে যুদ্ধের শুরু হয়ে যায় আগেই। বাজিকর জুয়ারী পাগল অর্ধপাগল সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে। কারণ তারা জানে এটাই সুবর্ণ সুযোগ।

জানলে অবাক হবেন, এসব খেলার যেখানে বাংলাদেশের নাম গন্ধ নাই, সে খেলাতেও দেশের শহরে, মফস্বলে জুয়ারীরা ফাঁদ পাতে। চায়ের দোকানে এমন এক জুয়ার আসরে বিনিয়োগকারী এক সিএনজি ড্রাইভারের গল্প শুনে বিস্মিত হয়েছি। যার মানে এই, ক্রিকেট তার শক্তি দুর্বলতা সব কিছু নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আর তার আক্রমণে কুপোকাত মানুষ!

মিডিয়াগুলোর দিকে তাকালে অবাক হবার বিকল্প দেখি না। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশের মিডিয়াও কম যায় না। ক্রিকেট মাঠে গড়াবার আগেই মিডিয়ায় শুরু হয় দেশপ্রেমের নামে উত্তেজনা ছড়ানো। পাকিস্তানী মিডিয়ার কথা আর বললাম না। তাদের কাছে ভারতকে হারানো মানেই বিশ্বকাপ জয়। এক সময় পাকিস্তানের সেলিম দুররানী হানিফ মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল বা ইমরান খানদের কাছে পর্যুদস্ত ভারতের এখন অন্য চেহারা। রোহিত শর্মা বিরাট কোহলি শুভমান গিলদের কাছে কোণঠাসা বাবর আজমরা এখন ইঁদুর দৌড়ে ব্যস্ত। এই যে পাল্টে যাওয়া ভারত, এর পেছনে তাদের উন্নয়ন, তাদের লগ্নি, তাদের রুপির জোরও কম না। কে জানে কোন খেলা আসলে কোথায় নির্ধারিত হয়?

বদলে যাওয়া এই ভারতকে কেউ চটাতে রাজী না। আইসিসি’র সবচাইতে ডাকসাইটে সদস্য ভারত। তাদের চটানো অনুচিত ভেবেই কাজ চলে। এ কথা বলছি না যে ভারতের ক্রিকেট এখন সাধারণ কিছু। বরং দলের এক থেকে দশ নাম্বার সব খেলোয়াড়ের ব্যাটিং বোলিং ফিল্ডিং-এ এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। একটা টোট্যাল স্পিরিট নিয়ে খেলছে রোহিত শর্মার দল। সে জায়গায় শ্রদ্ধা রেখেই বাকী কথাগুলো বলা।
এবারের বিশ্বকাপে আমাদের অর্জন কি আসলেই কম? না কি আমরা তৈরি হতে পারছি না? আমার মনে হয়েছে দলগত শৃঙ্খলা থাকলেও কোথাও দ্বন্দ্ব আছে। বিশেষ করে খেলতে যাবার আগে সিনিয়র ক্রিকেটার তামিম আর সাকিবের বাদানুবাদ ও দোষারোপ মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার কাজ করেছে। এ ছাড়াও ডোনাল্ড, হাতুড়ে সিংয়ের ফ্যাসাদও এখন প্রায় প্রকাশ্য। টাকার ওপর ভর করে চলা বোর্ডের জানা উচিৎ মূল বিষয় কিন্তু খেলা ও জয়। নয়তো এই রমরমা ভাব টিকবে না।

উপমহাদেশের ক্রিকেট শঙ্কারও জন্ম দিচ্ছে বৈকি। দেশে দেশে দুশমনি আর ঝগড়া কোনো খেলার উদ্দেশ্য হতে পারে না। ইংল্যান্ড অস্ট্রেলিয়া বা নিউজিল্যান্ডের সাথে এ দেশের লড়াই চলছে চলবে। কিন্তু তা দেশজ ফাইট বা লড়াই কিছু নয়। এবার বাংলাদেশের ক্রিকেট যা পেয়েছে তার নাম অভিজ্ঞতা। উপমহাদেশে টিকতে হলে এটাই পুঁজি করতে হবে। ক্রিকেট যে ভদ্রজনোচিত খেলা এবং তার মর্যাদা বেশি এটা মানার মতো জানার মতো খেলোয়াড়েরাই পারবে সমানে এগিয়ে নিতে। মাঠে উত্তেজনা বিশ্বাস বা অন্ধত্ব কোনো কাজে আসবে না।

জাকির হোসেন, সম্পাদক, সিটিনিউজ সেভেন ডটকম

rr
rr

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *