নায়িকা নয়, শাকিবের মা হয়ে আসছেন মাহি!
মার্চ ২৪, ২০২৪
শান্তিপূর্ণ ও অসহিংস আন্দোলন চলবে : মির্জা ফখরুল
মার্চ ২৪, ২০২৪

শালা-দুলাভাইয়ের পরিকল্পনায় শিক্ষার্থী অপহরণের শিকার,গ্রেফতার ৭

নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা

অপহরণ চক্রের সদস্য কামরুল হাসান (২৮) ব্যবসায়ী আনিসুর রহমানের গাড়ির চালক। সে প্রতিদিন গাড়ি চালয়ে সকালে আনিসুর রহমানের ছেলে মো.জামিনুর রহমানকে (১১) স্কুলে নিয়ে যায়। জামিনুর রহমান ধানমন্ডির মাস্টারমাইন্ড স্কুলের পঞ্চম শ্রেনীর শিক্ষার্থী। গত ২০ মার্চ সকালে কামরুল হাসান ভিকটিম জামিনুর রহমানকে নিয়ে মাস্টারমাইন্ড স্কুলের সামনে গেলে সাত অপহরণকারী এসে হাজির হয়। তারা জামিনুর রহমানকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

অপহরণের পর জামিনুর রহমানের পরিবারকে ফোন করে চক্রটি ১ কোটি ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে ১৪ লাখ টাকা দিয়ে জামিনুর রহমানসহ গাড়ি চালক কামরুল হাসানকে ছাড়িয়ে আনে। ভিকটিমের পরিবার তখনো জানতো না কামরুল হাসান অপহরণকারীদের একজন।

ভিকটিমের পরিবার জামিনুর ও গাড়ি চালককে মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনার পর ধানমন্ডি থানায় গত ২০ মার্চ একটি মামলা দায়ের করে। মামলা হওয়ার পর এ ঘটনায় ছায়াতদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) রমনা বিভাগের। ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে গাড়ি চালক কামরুল হাসানসহ সাতজনকে ২০ মার্চের পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় গ্রেফতার করে ডিবি রমনা বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে মাসুদ (৩৭), মো.নূর আলম (৩০), মো.কামরুল হাসান (২৮), মো.রনি মিয়া (৩০), মো.মনির হোসেন (৩২), মো.জনি বিশ্বাস (৪২) ও মো.আসলাম হাওলাদার। রাজধানী ঢাকাসহ কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

ডিবি জানায়, গ্রেফতার মাসুদ গাড়ি চালক কামরুল হাসানের দুলাভাই। তারা দুই জন পরিকল্পনা করে জামিনুর রহমানকে অপহরণ করে। দীর্ঘ দিন পরিকল্পনা করে তারা এই অপহরণ করে।

রোববার (২৪ মার্চ) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মাস্টামাইন্ড স্কুলের ৫ম শ্রেনীর ছাত্র মো.জামিনুর রহমান (১১) গত ২০ মার্চ সকালে গাড়ি চালক কামরুল হাসানসহ স্কুলে যাচ্ছিলো। সকাল সাড়ে ৭ টায় তারা স্কুলের সামনে পৌছালে তিন জন অপহরণকারী গাড়ি সামনে গিয়ে গতিরোধ করে। এর পর আরও চার জন অপহরণকারী গাড়ির সামনে আসে। এই সাত জন অপহরণকারী মিলে গাড়ি চালক কামরুল হাসানসহ জামিনুর রহমানকে অপহরণ করে নিয়ে সাভারের গেন্ডা এলাকায় চলে যায়। অপহরণটি পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী করা হয়। গাড়ি চালক কামরুল হাসান হলেন চক্রটির মূলহোতা মাসুদের শালা। কামরুল নিজেও এই চক্রের একজন সদস্য।

তিনি বলেন, অপহরণের পর চক্রটির একজন জামিনুর রহমানের বাবা আনিসুর রহমানের ব্যক্তিগত মোবাইলে ফোন করে ১ কোটি পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। অপহরণকারীরা ভিকটিমের বাবাকে আরও বলে যদি এ ঘটনা পুলিশ কিংবা কাউকে জানানো হয় তাহলে জামিনুর রহমানকে হত্যা করা হবে। এই হুমকি দেওয়ার কারণে ভিকটিমের বাবা ভয় পেয়ে মামলা করতে থানায় যায়নি। পরে ঘটনার দিন রাতে ভিকটিমের চাচা হাবিবুর রহমান ধানমন্ডি থানায় একটি মামলা রুজু করেন। মামলার পরেও ভিকটিমের বাবা পুলিশকে বলে ‘আপনারা জায়েন না, আপনারা গেলে তারা আমার ছেলেকে হত্যা করে ফেলবে’।

ডিবি প্রধান বলেন, ভিকটিমের বাবার কথা চিন্তা করে আর যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে যায় সেই চিন্তা করে আমরা প্রাথমিকভাবে যায়নি। পরে ঘটনার দিন রাত ১০ টায় ভিকটিমের পরিবার অপহরণকারীদের ১৪ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে জামিনুর রহমান ও গাড়ি চালক কামরুল হাসনাকে ছাড়িয়ে আনে। তবে আমাদের সিদ্ধান্ত ছিলো মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়িয়ে আনলেও আমরা অপহরণকারীদের ছাড়ব না। এরপর ডিবি রমনা বিভাগ এ বিষয়ে কাজ শুরু করে।

মুক্তিপণ দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ কুমিল্লা, ফেনী, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে অভিযান চালিয়ে গাড়ি চালক কামরুল হাসানসহ অপহরণকারী চক্রের সাত জনকে ডিবি রমনা বিভাগ গ্রেফতার করেছে।

গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই অপহরণের মূলহোতা হলেন গাড়ি চালক কামরুল হাসান ও আব্দুল্লাহ আল মামুন ওরফে মাসুদ। মাসুদের শালা হলো কামরুল হাসান। এরা দুই জনে মিলেই জামিনুরকে অপহরণের পরিকল্পনা করে। কামরুল হাসানসহ বাকি আসামিরা জেলে ছিলো। তারা জেলে বসে পরিকল্পনা করে কিভাবে বের হয়ে অপহরণ করা যায়।

তখন কামরুল জেলে গিয়ে তারা দুলাভাইয়ের কাছে জামিনুরকে অপহরণের কথা বলে। জেল থেকে জামিনে বের হয়ে তারা জামিনুরকে অপহরণ করে। চক্রটি একটি অপহরণ করে জেলে যায়, আবার জেল থেকে বের হয়ে অপহরণ করে।

গ্রেফতারদের জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায়,চক্রটির সদস্যরা বিভিন্ন বড় লোক ব্যবসায়ীর গাড়ি চালক হিসেবে নিজেদের লোককে চাকরি দেওয়া ব্যবস্থা করে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে অপহরণ করে।

নয়তোবা বড় লোকের গাড়ি চালককে কৌশিলে নিজেদের দলে ভিডিয়ে তথ্য সংগ্রহ করে অপহরণ করে। এই ঘটনায় ভিকটিমের পরিবারের ড্রাইভার কামরুল নিজেই এই অপহরণ চক্রের সক্রিয় সদস্য এবং তার সহযোগিতায় ও তার ভগ্নিপতি মামুনের পরিকল্পনায় এই অপহরণের ঘটনাটি সম্পন্ন হয়।

ডিবি প্রদান আরো বলেন, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অপররণের ঘটনায় আমরা দেখেছি এসব ঘটনায় গাড়ি চালকরা জড়িত থাকেন। মাস্টারমাইন্ড এর পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থীর অপরনের ঘটনায়ক গাড়ির চালক কামরুল হাসান জড়িত। তাই গাড়িচালক ও বাসায় কাজের বুয়া নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সতর্কতার অবলম্বের প্রয়োজন রয়েছে।

//এস//

rr
rr

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *