জাকির হোসেন:
ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি। কয়েকদিন আগে এক অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, রাজধানীতে যাতে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে না পারে, সেজন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি সেগুলো যাতে চলতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
শনিবারও রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে দাপটের সঙ্গেই চলেছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। এদিকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধের প্রতিবাদে রোববার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন চালকরা। এ সময় মিরপুর-১১-এ বেশ কয়েকটি বাসের কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে। এর পরপরই বিভিন্ন এলাকায় যানবাহন চলাচল কমে যায়।
কোনো কোনো এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যাত্রীদের। রাজধানীতে অটোরিকশাচালকদের সঙ্গে পুলিশের পালটাপালটি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে রাজধানীতে বহুদিন ধরেই ইঁদুর-বিড়াল খেলা চলছে। এসব অবৈধ যান বন্ধ না হওয়ার পেছনে সক্রিয় রয়েছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অভিযোগ রয়েছে, এ সিন্ডিকেটের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতা, পুলিশ ও চাঁদাবাজরাও যুক্ত। বিদ্যুৎ সংকটের সময়ে ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলোর পেছনে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুতের অপচয় হচ্ছে।
বর্তমানে রাজধানীতে অনেক লক্কড়ঝক্কড় গাড়ি চলে, এ নিয়েও সম্প্রতি উষ্মা প্রকাশ করেছেন সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী। এসব লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন বন্ধে কর্তৃপক্ষ কঠোর না হলে নাগরিকদের দুর্ভোগ বাড়বে। পাশাপাশি এসব যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে ঢাকার সড়কে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান এবং এ ধরনের তিন চাকার যান চলাচল বন্ধে শনিবার এক বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ-বিআরটিএ।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘২০১৮ সালের সড়ক পরিবহণ আইন অনুযায়ী ব্যাটারি/রিকশা বা ভ্যান বা এ ধরনের থ্রি-হুইলার এবং ফিটনেসের অনুপযোগী, রংচটা, জরাজীর্ণ ও লক্কড়ঝক্কড় মোটরযান চালানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’ প্রশ্ন হলো, বিআরটিএ কি কেবল বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেই দায়িত্ব শেষ করবে?
এক গবেষণায় দেখা যায়, প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় যত মানুষের মৃত্যু হয়, এর ২০ শতাংশই ঘটে ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঝুঁকিপূর্ণ এ যানবাহনটি যাতে রাজধানীতে চলাচল করতে না পারে, সেজন্য কর্তৃপক্ষের কঠোর হওয়া উচিত। অনুমোদিত যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে আলোচনার সুযোগ থাকে। কিন্তু অবৈধ যানবাহনের কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে আলোচনার সুযোগ থাকে না। দেশে ৬ লাখের বেশি যানবাহনের ফিটনেস সনদ হালনাগাদ নেই।
এসব অবৈধ যানের কারণে সড়কে চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। দেশে দক্ষ চালকের সংকট রয়েছে। রিকশা ও ইজিবাইকের কারণে মহাসড়কেও দুর্ঘটনা বাড়ছে। বস্তুত যেসব সমস্যার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পায়, সেসব সমস্যার সমাধানে কর্তৃপক্ষের সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি আছে কি না, তাও স্পষ্ট নয়। বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনা সমস্যা কী ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা বহুল আলোচিত। সড়ক নিরাপদ করতে কী করণীয়, এটিও বহুল আলোচিত। এ
সব বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে নানা পরামর্শ দেওয়া হলেও তা অরণ্যে রোদনে পর্যবসিত হচ্ছে। ফলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়েই চলেছে। সড়কের শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় যা যা করণীয়, সবই করতে হবে। সড়কে যাতে কোনো অবৈধ যান চলাচল করতে না পারে, এটি নিশ্চিত করা জরুরি। এ খাতের দুর্নীতি রোধে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না হলে, সমস্যাগুলো আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।
জাকির হোসেন, সম্পাদক, সিটিনিউজ সেভেন ডটকম