নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারকে কলকাতায় নিয়ে হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তার সিলাস্তি রহমানসহ তিনজনকে আট দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। আদালতে তোলার সময় ক্যামেরা দেখে মুখ লুকাতে থাকেন সিলাস্তি রহমান। পরে তাকে আদালতের ডকে তোলা হলে তিনি কাঁদতে থাকেন। আদালতে শুনানির আগে সিলাস্তি রহমান বলেন, আমি কীভাবে আসামি হই, জিজ্ঞাসা করেন। আমি শুধু ওই বাসায় ছিলাম। তাছাড়া কিছুই জানি না। আসামিরা হলেন- শিমুল ভুইয়া ওরফে শিহাব ওরফে ফজল মোহাম্মদ ভুইয়া ওরফে আমানউল্লাহ সাইদ ও তানভির ভুইয়া ও সিলাস্তি রহমান।
এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার হত্যায় নাম আসা তরুণী সিলাস্তি রহমান চেয়েছিলেন মডেল হতে। কিন্তু পুরান ঢাকার এই তরুণী বিত্তশালী আক্তারুজ্জামান শাহিনের খপ্পরে চলে যান অন্ধকার জগতে। মার্কিন প্রবাসী শাহিন দেশে এলেই ঘুরে বেড়াতেন তার সঙ্গে। বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নিতেন শাহিনের ফ্ল্যাটে। কলকতায় এমপি আনার খুন হওয়ার পর মাস্টারমাইন্ড শাহিনের বান্ধবী হিসেবে নাম আসে এই সিলাস্তি রহমানের, যার আরেক নাম সেলে নিস্কি। গত ১৩ মে কলকাতায় এমপি আনার খুন করার পর ১৫ মে ঢাকায় চলে আসেন প্রধান কিলার আমানুল্লাহ ওরফে শিমুল ভূঁইয়া। তার সঙ্গে একই ফ্লাইটে কলকাতা থেকে ঢাকায় ফেরেন শাহিনের বান্ধবী সিলাস্তি রহমান। বিমানবন্দর থেকে চলে যান বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় শাহিনের অভিজাত ফ্ল্যাটে। এমপিকে খুন করে সফল হওয়ায় ওই রাতেই শাহিন সেখানে মনোরঞ্জন পার্টির আয়োজন করেন। সেখানে মনোরঞ্জন করেন এই শিলাস্তি ওরফে সেলে নিস্কি। এর আগে ৩০ এপ্রিল শাহিনের সঙ্গে গিয়েছিলেন কলকাতায়। ১০ মে শাহিন দেশে ফিরলেও সিলাস্তিকে রাখা হয় কলকাতাতেই।
সিলাস্তির গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুরে। তবে তিনি বড় হয়েছেন পুরান ঢাকায়। অবশ্য বিত্তশালীদের ডেরায় গিয়ে নিজেও থাকতেন উত্তরার অভিজাত ফ্ল্যাটে। এই সিলাস্তিকে দিয়েই এমপি আনারকে কলকাতা নেওয়ার ফাঁদ পাততে পারেন খুনের মাস্টারমাইন্ড শাহিন। হয়তো ওই হানি ট্র্যাপেই পা দিয়ে নিজের জীবন দিয়েছেন এমপি আনার।
সূত্রে বলা হয়, এমপি আনর হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামানের কলকাতায় যাওয়ার দুই মাস আগেই জিহাদকে ডেকে আনা হয়। জিহাদ জানিয়েছে- আখতারুজ্জামানের নির্দেশে তিনিসহ চারজন এমপি আনারকে ফ্ল্যাটে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। হত্যার পর এমপি আনারের শরীর থেকে মাংস এবং হাড় আলাদা করে জিহাদ। পরে মূলত পরিচয় নষ্ট করার জন্য এমপির মাংস কিমা করে তা প্লাস্টিকের ব্যাগে রাখা হয়। আর হাড়গুলোকে ছোট ছোট টুকরো করে নেওয়া হয়। পরে ওই ব্যাগগুলো ফ্ল্যাট থেকে বের করে নানা ধরনের যানবাহন ব্যবহার করে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ফেলে দেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, জিহাদ হাওলাদার (২৪) একজন বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। তার বাড়ি খুলনা জেলার দিঘলিয়া থানায়। তার বাবার নাম জয়নাল হাওলাদার। তবে জিহাদ বসবাস করত ভারতের মুম্বাই শহরে। সেখানে সে একটি মাংসের দোকানে কসাইয়ের কাজ করত।
//এস//