বেনজীর দোষী সাব্যস্ত হলে দেশে তাকে ফিরতেই হবে : কাদের
জুন ২, ২০২৪
এসআইয়ের ওপর হামলা: ৪ হিজড়া গ্রেপ্তার
জুন ৩, ২০২৪

ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডব: ত্রাণ ও পুনর্বাসনে তৎপর হতে হবে

জাকির হোসেন:

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রিমাল’ দেশের উপকূলে আঘাত হেনেছে। এতে কোনো কোনো স্থানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে; নষ্ট হয়েছে জমির ফসল, শাকসবজি ও মাছের ঘের। বেশ কয়েকজনের প্রাণহানির খবরও পাওয়া গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছিল, এ ঝড় ‘আইলা’র মতো বিধ্বংসী ও ধ্বংসাত্মক হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রচণ্ডতা দেখে সরকার তাই আগে থেকেই বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করেছিল। এর ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেকাংশেই হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। তবে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের পর ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র পেতে কয়েকদিন লেগে যায়। তাই প্রকৃত চিত্র জানতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। যে কোনো ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেলেই সরকার উপকূলীয় এলাকার মানুষের সুরক্ষায় ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নেয়, এটি ইতিবাচক। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস এখনো স্থানীয়দের অনেকে যথাযথভাবে আমলে নেন না, ফলে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসা সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে উপকূলীয় এলাকার মানুষকে আরও সচেতন হবে।

আমরা নিকট অতীতে দেখেছি, ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলীয় এলাকায় দুর্বল বাঁধের কারণে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এবার রিমালের আঘাতেও ভেঙে গেছে অনেক বাঁধ। ফলে বিপুল এলাকা প্লাবিত হয়েছে। দেশের বিস্তীর্ণ উপকূলীয় এলাকায় উন্নত মানের বাঁধ না থাকাই এর কারণ। আগামীতে ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে উপকূলীয় এলাকায় টেকসই বাঁধ নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে দুর্নীতি রোধ করাটাও জরুরি। রিমালের আঘাতে দেশের কোনো কোনো স্থানে বিদ্যুৎ, টেলিফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। দ্রুত এসব মেরামতের প্রস্তুতি নিতে হবে। জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলীয় এলাকার নিুাঞ্চলের মানুষের কী ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা নিশ্চিত হয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে। দুর্গত মানুষের জন্য বিশেষ করে বিশুদ্ধ পানি, শুকনো খাবার এবং চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে গুরুত্ব দিতে হবে। ঘরবাড়ি হারিয়েছেন যারা, তাদের জন্য দ্রুত আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

যে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষেত্রে আগাম ব্যবস্থা, সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য। রিমালের ক্ষেত্রে আগাম ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক মানুষের ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা হলেও কম হয়েছে। বাস্তবতা হলো, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধ বা বন্ধ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তবে পূর্বপ্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব। যেমন, উপকূলীয় অঞ্চলের প্যারাবন (ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট) কোনোভাবেই ধ্বংস করা চলবে না। অধিকন্তু নতুন নতুন সবুজায়নের ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। বেড়িবাঁধগুলোকে যোগাযোগের অবকাঠামো হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। সাইক্লোন শেল্টারগুলোর সংখ্যা ও মান বাড়াতে হবে। সিগন্যালিং সিস্টেমের উন্নতি ঘটাতে হবে। পাশাপাশি উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর স্থানীয় প্রশাসনে বছরব্যাপী খাদ্য মজুত থাকতে হবে, যাতে যে কোনো সময়ে দুর্যোগ ঘটলে বাইরে থেকে ত্রাণ আসার আগেই স্থানীয় পর্যায় থেকে মানুষের ক্ষুধা মেটানো যায়। এমনিতেই মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে উপকূলীয় এলাকার মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। কাজেই প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর প্রশাসনের পাশাপাশি এনজিওগুলো ও বিত্তবানরাও দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াবে, এটিই কাম্য। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আগামীতে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাদুর্ভাব ঘটবে এবং এর মাত্রা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। সরকারের উচিত এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় ব্যাপক প্রস্তুতি ও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া।

জাকির হোসেন, সম্পাদক, সিটিনিউজ সেভেন ডটকম

rr
rr

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *